[১] নেক আমল ধনাঢ্যতার চাবিকাঠি

[১]

নেক আমল ধনাঢ্যতার চাবিকাঠি

❛ নেক আমল ❜ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। এর আরবী শব্দ ❛ইহসান❜। পবিত্র কোরআনে এর বহু উপকারের কথা উল্লেখ হয়েছে। নেক আমলের কারণে ধনাঢ্যতা বৃদ্ধি হওয়ার কথাও বারবার এসেছে। বনি ইসরাইল জাতিকে আল্লাহ তাঁর প্রদত্ত নিয়ামত ও ধনসম্পদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, যদি তারা নেক আমল করে তাহলে তাদের আরও বৃদ্ধি করে দেবেন। তিনি বলেন, ❛স্মরণ করো, যখন আমি বললাম, এই জনপদে প্রবেশ করো, যেথা ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দ্যে আহার করো, নতশিরে প্রবেশ করো দরজা দিয়ে এবং বলো, ‘ক্ষমা চাই‘। তাহলে আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব এবং সৎকর্মপরায়ণ লোকদের প্রতি আমার অনুগ্রহ বৃদ্ধি করব।❜ (সূরাহ্‌ আল-বাকারাহ্‌, ২ঃ৫৮)
আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহিম (‘আলাইহিস সালাম) -এর প্রতি তার কৃত অনুগ্রহ সম্পর্কে বলেন, ❛আর এটাই ছিল আমার যুক্তিপ্রমাণ, যা আমি ইবরাহিমকে তার সম্প্রদায়ের মোকাবিলায় দান করেছিলাম। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নীত করি। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক মহাপ্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। আর আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়াকুব। এদের প্রত্যেককে আমি সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। এর পূর্বে নুহকেও আমি সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং তার বংশধর দাউদ, সুলায়মান, আইয়ুব, ইউসুফ, মুসা ও হারুনকেও। আর এভাবেই সৎকর্মপরায়ণদের আমি পুরস্কৃত করি।❜ (সূরাহ্‌ আল-আন’আম, ৬ঃ৮৩, ৮৪)
আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহিম (‘আলাইহিস সালাম)-এর প্রতি এভাবে অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাকে উত্তম সন্তানসন্ততি দান করেছেনসবাইকেই তিনি সত্য অনুসরণ করার তাওফিক দিয়েছেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেছেন। এভাবেই তিনি ইতিপূর্বে হযরত নুহ (‘আলাইহিস সালাম)-কেও সৎপথ প্রদর্শন করেছিলেন। আর এসবই ছিল তাদের সৎকর্মের প্রতিদান। তারা সৎকর্ম করেছিলেন, আল্লাহ তাআলার ইবাদত উত্তমরূপে সম্পাদন করে, ইবাদতে শ্রম দিয়ে এবং আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির জন্য ধনসম্পদ ব্যয় করে। আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত নবীগণকে তাদের সৎকর্মের পুরস্কার দানের ঘোষণা দিয়েছেন। কারণ, তিনি প্রত্যেক সৎকর্মপরায়ণকেই তার সৎকর্ম অনুপাতে দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কার ও প্রতিদান দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ❛আল্লাহ তো সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।❜ (সূরাহ ইউসুফ, ১২ঃ৯০)
[ শিক্ষণীয় বিষয় ]
১) আল্লাহ তাআলা তো বান্দার নেক আমল কবুল করে থাকেন এবং বান্দাকে তার নেক আমলের বিনিময় দিয়ে থাকেন। তিনি বলেছেনঃ ❛উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ব্যতীত আর কী হতে পারে?❜ (সূরাহ্‌ আর-রহমান, ৫৫ঃ৬০)
২) আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে তাদের আমলের উত্তম প্রতিদান দান করেন। তিনি বলেনঃ ❛যারা সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে এই দুনিয়ায় মঙ্গল। আর আখিরাতের আবাস তো আরও উৎকৃষ্ট। মুত্তাকিদের আবাসস্থল কতই না উত্তম!❜ (সূরাহ্‌ আন-নাহল, ১৬ঃ৩০)
অর্থাৎ তারা এই পৃথিবীতে পাবে উত্তম জীবন ও উত্তম ভোগসামগ্রী। উত্তম বাসস্থান ও প্রশস্ত রিজিক। নেককার সন্তানসন্ততি ও সুনাম-সুখ্যাতি। প্রশান্ত আত্মা ও নূরানি অন্তর। তৃপ্তিদায়ক জীবন ও শান্তিময় ভোগসম্ভার। সাহায্য ও আনন্দ। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন: ❛মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে-কেউ সৎকর্ম করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব।❜ (সূরাহ্‌ আন-নাহল, ১৬ঃ৯৭)
কত সমৃদ্ধ ও প্রাচুর্যপূর্ণ প্রতিদান! এই ক্ষণস্থায়ী ও তুচ্ছ পার্থিব জীবনেও উত্তম জীবনোপকরণ, আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনেও উত্তম জীবনোপকরণ!
[ করণীয় ]
  • আমাদের আকিদা-বিশ্বাস ও নিয়তকেও উন্নত করতে হবে। এর উপায় হলো,
    • প্রত্যেক কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত করা। তাঁকে ভালোবাসা, তাঁর কাছে অনুগ্রহ ও প্রতিদানের আশা রাখা। তাঁর মহত্ত্ব ও বড়ত্বের সামনে নত ও বিনীত থাকা। গোপনে ও প্রকাশ্যে তাঁর ধ্যানে মগ্ন থাকা।
  • আমলকেও সুন্দর করতে হবে। এর উপায় হলো,
    • আমল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। নবীজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সুন্নাত অনুসারে করা।
    • এসবের পাশাপাশি ধনসম্পদ ব্যয় করতে হবে আল্লাহর জন্য।
    • তাঁর বান্দাদের জন্য অন্তরে মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতে হবে।
    • তাদের হক আদায় করতে হবে।
    • তাদের সঙ্গে দয়ার আচরণ করতে হবে এবং
    • মেলামেশায় তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে।
[ শেষ কথা ]
ইহসানের অর্থ ব্যাপক। বিভিন্ন নেক আমল এর অন্তর্ভুক্ত আছে। ইহসানের বর্ণনা দিয়ে নবীজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ❛তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর তুমি তাঁকে দেখতে না পেলেও তিনি তো তোমাকে দেখছেন।❜ (সহিহ মুসলিম, ০১)