কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে রিযিক বৃদ্ধির উপায়

কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে

( রিযিক বৃদ্ধির উপায় )

 

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং পরীক্ষার মধ্যে রেখেছেন। তিনি বলেছেন, ❛ আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু থেকে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য। এজন্যই আমি তাকে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন করেছি। ❜ (ইনসান: ২)
তারপর তিনি লোভনীয় বস্তুসমূহ, বিনোদন, ধনসম্পদ ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির প্রতি মানুষের স্বভাবে আকর্ষণ স্থাপন করেছেন। বলেছেন, ❛ নারী, সন্তান, রাশিকৃত স্বর্ণরৌপ্য, চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদি পশু এবং খেতখামারের প্রতি আকর্ষণকে মানুষের জন্য সুশোভিত করে দেওয়া হয়েছে। এইসব ইহজীবনের ভোগ্যবস্তু। আর আল্লাহর কাছেই রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল। ❜ (আলে ইমরান: ১৪)
বান্দার প্রতি আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হলো, কুরআনের পরশমাখা জীবন গড়া, তার বিধি-নিষেধের ওপর অবিচল থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ❛ আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা আমার ইবাদত করবে। ❜ (সূরা আয-যারিয়াত, ৫১ঃ৫৬)
এ থেকে বোঝা যায়, এই বিশ্বজগতের মূল বিষয় হলো বান্দা ও মাবুদের সম্পর্ক। একদিকে চরম মুখাপেক্ষী বান্দা, অপরদিকে পরম অমুখাপেক্ষী, মহামর্যাদাবান, মহানুভব ও পরম উপকারী মাবুদ।
এখানে এসেই প্রশ্ন জাগে, ইবাদত ও দাসত্বের আলোচনা করতে গিয়ে রিজিকের প্রসঙ্গকে আল্লাহ্‌ কেন টেনে আনলেন, ❛ আমি তাদের থেকে রিযক চাই না, আর আমি এও চাই না যে, তারা আমাকে খাওয়াবে। ❜ (সূরা আয-যারিয়াত, ৫১ঃ৫৭)
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইবাদত-বন্দেগির আলোচনার পরপরই এসেছে রিজিকের আলোচনা। কেননা, রিজিকের পেরেশানি হচ্ছে মানবজাতির সকল চিন্তাচেতনার কেন্দ্রবিন্দু। এই পেরেশানীতে ডুবে গিয়ে মানুষ ইবাদত-বন্দেগিতে গাফলতি করে।

এই আয়াতগুলো ইবাদতের গুরুত্বের প্রতি বান্দার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সাথে এটাও পরিষ্কার করে দিচ্ছে, ইবাদত হলো রিজিক ও জীবনোপকরণের চাবিকাঠি। আর জীবিকা অন্বেষণে মাত্রাতিরিক্ত ব্যস্ততাই বান্দার ইবাদতে ত্রুটি সৃষ্টির কারণ। এ থেকেই জীবনের ধ্বংস ও বিপর্যয়ের উৎপত্তি ঘটে। কারণ, সমস্ত সৃষ্টি থেকে পরম অমুখাপেক্ষী সত্তা একমাত্র আল্লাহ। তিনিই সমগ্র বিশ্বজগতের সকল কিছুর রিজিকদাতা। তিনি তাঁর শক্তি ও ক্ষমতায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহই রিজিক দান করেন এবং তিনি অতি প্রবল, মহাপরাক্রান্ত।’ (সূরা আয-যারিয়াত, ৫১ঃ৫৮)

মাতৃগর্ভে থাকতেই সকলের রিজিক লিখে দেওয়া হয়েছে। ইবাদত-বন্দেগী রিজিককে চুম্বকের মতো টানে। এই সত্যের মাঝেই নিহিত আছে আত্মার শান্তি। 

তাই অল্প দিনে ধনী হতে চান? এমন একটি চমকপ্রদ বাক্য শুনলে বা দেখলে আমরা থমকে দাঁড়াই। সবাই চাই দ্রুত ধনী হতে। টাকা কামানোর চুরি-বিদ্যা শিখতে চাই। অথচ এই অর্থ-বিত্ত রিযিকের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করে। এর আগে আছে দুনিয়া-আখিরাতের নিরাপত্তা, নেককার জীবনসঙ্গিনী পাওয়া, সুস্থ ও দ্বীনদার সন্তান লাভ করা, রবের নির্ধারিত তাকদীরে সন্তুষ্ট থাকার মত গুরুত্বপূর্ণ অনেক আরো অনেক বিষয়।

আর আমাদের আলোচনা থাকবে রিযিকের সামগ্রিক বিষয়কে ঘিরেই। আলোচনা গুলো তুলে ধরা হবে বিভিন্ন বক্তার লেখনী ও বয়ান থেকে যা নেওয়া হয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে। অর্থ-বিত্তের পাশাপাশি জীবন ধারণের যত কিছুতে বরকত প্রয়োজন হয়, সেই সব কিভাবে আমলের মাধ্যমে অর্জন করা যায় তা এই অধ্যায়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করা হবে ইনশা’আল্লাহ। কুরআন-সুন্নাহ থেকে প্রাপ্ত এবং পূর্বসূরি নেককারদের দ্বারা পরীক্ষিত যে সকল আমল করলে একজন মানুষ তার সামগ্রিকে রিযিকে বরকত দেখতে পাবে তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

 

গ্রন্থকারঃ আনোয়ার দাউদ আন্‌নাবরাবি

 

[ বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ লেখাগুলো কিছুওটা পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত]