গল্পের আসরঃ (২) মায়ের অভিশাপ

গল্পের আসরঃ (২)

( মায়ের অভিশাপ )

গল্পটি সংকলিত হয়েছে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে।➊  রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

জুরাইজ ছিলেন একজন ইবাদতগুজার মানুষ। তিনি একটি ইবাদতখানা নির্মাণ করে সেখানে থাকতেন।

একদিন তাঁর কাছে তাঁর মা আসেন। তখন তিনি সালাত পড়ছিলেন। মা ডাক দেন, ‘হে জুরাইজ!’ তিনি মনে মনে বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমি সালাত পড়ব, না মায়ের ডাকে সাড়া দেবো!’ একটু ভেবে তিনি সালাতেই মগ্ন থাকেন। অবস্থা দেখে মা চলে যান।

পরের দিন মা আবার আসেন। ওই সময়ও তিনি সালাত পড়ছিলেন। মা ছেলেকে ডাকেন, ‘হে জুরাইজ!’ তিনি মনে মনে বলেন, ‘হে আমার রব, আমি সালাত পড়ব না মায়ের ডাকে সাড়া দেবো!’ শেষে তিনি সালাতেই মগ্ন থাকেন। মা ফিরে যান।

তৃতীয় দিন মা পুনরায় আসেন। ওই সময়ও তিনি সালাত পড়ছিলেন। মা ডাক দেন, ‘হে জুরাইজ!’ তিনি মনে মনে ভাবেন, ‘হে আমার রব, আমি সালাত পড়ব না মায়ের ডাকে সাড়া দেবো!’ যথারীতি তিনি সালাতেই মগ্ন থাকেন। এবার মা বলে ওঠেন, ‘হে আল্লাহ, বেশ্যা নারীর চেহারা না দেখিয়ে তাঁকে মওত দিয়ো না।’

ধীরে ধীরে বনু ইসরাইলের মাঝে জুরাইজ ও তার ইবাদতের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে এক বেশ্যা নারী ছিল। সে এতটাই সুন্দরী ছিল যে তাকে দিয়ে সুন্দরের উপমা দেওয়া হতো। একদিন সে লোকদের বলে, ‘তোমরা চাইলে আমি জুরাইজকে ফিতনায় ফেলতে পারি।’ তারপর সে জুরাইজের কাছে গিয়ে নিজেকে পেশ করে। কিন্তু জুরাইজ তার দিকে ফিরেও তাকাননি।

জুরাইজের ইবাদতখানায় একজন রাখালও থাকত। বেশ্যা নারীটি এবার তার কাছে নিজেকে পেশ করে। সে তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। ফলে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। বাচ্চাটি ভূমিষ্ঠ হলে সে দাবি করে বসে, ‘এটি জুরাইজের ছেলে।’ এ কথা শুনে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তারা জুরাইজকে ইবাদতখানা থেকে জোর করে নামিয়ে আনে; তার ইবাদতখানা ভেঙে ফেলে। এমনকি তাকে প্রহার করতে শুরু করে।

জুরাইজ (আশ্চর্য হয়ে) জানতে চান, ‘ব্যাপার কী? তোমরা আমার সাথে কেন এমন করছ?’

তারা বলে, ‘তুমি ওই বেশ্যার সঙ্গে ব্যভিচার করেছ। সে তোমার বাচ্চা প্রসব করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাচ্চাটি কই?’

লোকজন গিয়ে বাচ্চাটি নিয়ে আসে। জুরাইজ বলেন, ‘আমাকে সালাত পড়তে দাও।’

সালাত শেষে তিনি বাচ্চাটির কাছে আসেন। তার পেটে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘হে শিশু, তোমার পিতা কে?’

বাচ্চাটি উত্তর দেয়, ‘অমুক রাখাল।’

এই আশ্চর্য দৃশ্য দেখে লোকজন জুরাইজের দিকে ছুটে আসে। ভক্তিতে তাকে চুমু খেতে থাকে এবং তার শরীর মুছতে শুরু করে। সবাই জুরাইজের কাছে আবেদন করে, ‘আমরা স্বর্ণ দিয়ে আপনার ইবাদতখানা পুনর্নির্মাণ করব।’

তিনি তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আগে যেমনটি ছিল মাটি দিয়ে বানিয়ে দাও।’ তার নির্দেশমতো লোকেরা ইবাদতখানাটি পুনরায় তৈরি করে দেয়।

 

হাদিস হতে শিক্ষা

 

উপরের প্রত্যেকটি পাঠগুলোর বিশদ ব্যাখ্যা জানতে প্রত্যেক পাঠের লিঙ্কের উপর আপনি ক্লিক করলে ঐ আলোচনা চলে আসবে এবং আপনি আরো ভালো করে গল্পের শিক্ষণীয় বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।

 

[ উৎস ]

সহিহুল বুখারিঃ ১২০৬, সহিহু মুসলিম: ২৫৫০। হাদিসের মানঃ সহিহ