একটি আদর্শ মুসলিম পরিবার কীভাবে গঠন করা যায়?

একটি আদর্শ মুসলিম পরিবার কীভাবে গঠন করা যায়?

মুহাম্মাদ আতিক উল্লাহ

 

একটি আদর্শ মুসলিম পরিবার কীভাবে গঠন করা যায়? কী করলে পরিবারে দ্বীনের চর্চা অব্যাহত রাখা সহজ হয়? এজন্য নিম্নে কিছু পরামর্শ দেওয়া থাকল,
১. অভিজ্ঞ একজন আলেম (মুফতি)-এর সাথে পারিবারিকভাবে যুক্ত থাকা আবশ্যক। যাকে মাঝে মধ্যে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে আনা যাবে। প্রয়োজনে যার কাছে গিয়ে মাসআলা চাওয়া যাবে। পরামর্শ করা যাবে। সময়-সুযোগমতো হুজুর বাড়িতে এসে অল্পসময় দীনি কথা শোনাবেন। কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়লে হেকমতের সাথে ধরিয়ে দেবেন।
২. আলেমকে দাওয়াত দেওয়ার সময় তার আহলিয়াকেও দাওয়াত দেওয়া জরুরি। তাহলে বাড়ির মহিলাগণ হুজুরের আহলিয়ার সাথে পরিচিত হবেন। প্রয়োজনে তার মাধ্যমে হুজুরের কাছ থেকে মাসআলা জেনে নেবেন। আপনি এই কাজের মাধ্যমে শুধু নিজেই লাভবান হচ্ছেন তা নয়, একটি দাঈ পরিবার গড়ে উঠতেও সাহায্য করছেন।
৩. সবজান্তা নিষ্পাপ হুজুর অনুসন্ধান করলে জীবনেও তা মিলবে না। সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা ও দোয়া করার পর আল্লাহ যাকে মিলিয়ে দেন, ভালো। নিজের অবস্থানের আশপাশের হুজুর হওয়া জরুরি। যখন তখন তাকে পাওয়া যাবে। কাছেধারে অভিজ্ঞ কাউকে পাওয়া না গেলে দূরের কারো শরণাপন্ন হতে হবে। কয়েক বাড়ি মিলে, কয়েক মহল্লা মিলে হুজুরকে সসম্মানে আনতে হবে। ব্যাপক আয়োজনের তো দরকার নেই। এলাকার যুবকশ্রেণি চাইলে অনায়াসে এই ব্যবস্থা করা সম্ভব।
৪. সচেতন (প্র্যাকটিসিং) মুসলিম হয়েও একজন আলেমের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ না থাকাটা খুবই দুঃখজনক। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে ‘ঘরোয়া মাহফিল’ নামে আমরা  চাইলে অনলাইন ও অফলাইনে বিশেষ একটি মেহনতও শুরু করতে পারি। ইনশাআল্লাহ এই প্রচেষ্টাও বা কম কিসের?
৫. ইসলাম চর্চার এটাই আবহমান ধারা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাল থেকেই এই ধারা চলে আসছে। বর্তমান সমাজে হুজুরদের দাওয়াত করে খাওয়ানোর যে ধারা প্রচলিত আছে, এটা কিন্তু সেই নববী ধারারই পরিবর্তিত রূপ। শুধু খাওয়া-দাওয়াটুকু বাকি আছে, বাকি মূল উদ্দেশ্য অন্তর্হিত হয়ে গেছে।
৬. একজন হুজুরের সাথে কীভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠবে? হুট করে গিয়েই বলব, হুজুর আপনাকে আমাদের পারিবারিক হুজুর হতে হবে, এভাবে? উঁহু! হুজুরের সাথে প্রথমে কিছুদিন এমনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হবে। সম্ভব হলে তাওফিক অনুযায়ী হাদিয়া প্রদানও হতে পারে। ধীরে ধীরে সম্পর্কটা পাকা করে তুলতে হবে। তারপর বাড়িতে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
৭. সম্ভব হলে পুরো পাড়া বা মহল্লার সবাই একজোট হয়ে একজন হুজুরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। মাসে অন্তত একবার হলেও হুজুরকে ঘরে বা মহল্লায় আনা জরুরি। হাজারো পরিবার আছে, তিনপুরুষ মিলেও একবার কোনো হুজুরকে বাড়িতে আনার সৌভাগ্য হয়নি। না না, খাবার- দাবারের ‘মোল্লা প্রথার’ কথা বলছি না, হুজুরের কাছ থেকে নসিহত শোনার উদ্দেশ্যে দাওয়াতের কথা বলছি।
৮. এখানে বিখ্যাত, তুমুল ব্যস্ততার জালে আবদ্ধ, পেশাদার বক্তা হুজুরের কথাও বলা হচ্ছে না। ব্যস্ততার কারণে তাদেরকে সবসময় মনের মতো করে পাওয়া যাবেও না। হুজুর বাছাই করতে হবে অনলাইন-মিডিয়ার প্রভাব ও মোহমুক্ত হয়ে।
৯. তবে হ্যাঁ, এই ব্যবস্থা শুধু আওয়াম অর্থাৎ জেনারেল শিক্ষিত পরিবারের জন্যই নয়, বরং আলেম পরিবারের জন্যও জরুরি। ঘরের মানুষকে সবসময় সব কথা বলা যায় না। ঘরের মানুষ সবসময় কাছের মানুষের নসিহত গুরুত্বও দিতে চায় না। বাইরের কেউ এসে নসিহত করলে বাড়তি গুরুত্ব থাকে।
১০. মেনে নিলাম, পরিবারের সবাই অনলাইনে বিখ্যাত ব্যক্তিগণের বয়ান শোনেন। তারপরও বলব, অফলাইনে একান্ত ঘরোয়া আয়োজন দরকার। হাতের কাছে পাওয়া হুজুরদের হয়তো অনলাইনের মতো তেজালো, ওজস্বী চৌকস ধরন নেই, হয়তো গুছিয়ে কথাও বলতে পারেন না, এতৎসত্ত্বেও বলব, ঘরোয়া আয়োজন দরকার।
১১. বেশিরভাগ অভিজ্ঞ আলেম কিন্তু এভাবে ঘরে ঘরে যেতে রাজি হবেন না। এই সমস্যা বা অচলাবস্থা অবসানের একটাই উপায়, হুজুরের সাথে প্রথমে ব্যক্তিগত ঘরোয়া সম্পর্ক গড়ে তোলা। হুজুরের জড়তা সংকোচ ভাঙানো। তারপর ঘরে আনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে । ইস্তেখারা ও হেকমতের সাথে অগ্রসর হলে কোনো কাজই অধরা থাকে না।
১২. যাদের কথা বলার কিছুটা হলেও যোগ্যতা আছে, তাদের উচিত উম্মতের ডাকে সাড়া দেওয়া। বড় দুর্দিন যাচ্ছে। উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থের দিকে তাকিয়ে হলেও নিজেকে গণমানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া উচিত।
১৩. বিশুদ্ধ নববীধারায় হুজুর দাওয়াত দিয়ে ঘরে আনার সুন্নতি রেওয়াজ কিন্তু এখনো নির্দিষ্ট মহলে সীমিত পরিসরে হলেও বিদ্যমান আছে। এখন প্রয়োজন এর ব্যাপক প্রচলন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আপনার আমার এই রকম প্রেচষ্টা সফল করুন এবং কবুল করুন। (আমিন)