অন্তরের আদব সিরিজঃ অহংকারী হবেন না

[ হাদিস ]

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

لؘا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ

❛যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।❜ (1)

 

[ ব্যাখ্যা ]

এ হাদিসে বিশেষ সতর্কবার্তা ও শাস্তির ধমক এসেছে। এখানে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহংকারীদের সতর্ক করে দিয়েছেন যে, অহংকারীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আমরা যেন এমন নিকৃষ্ট দোষ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখি, সে জন্য এ সতর্কবার্তা।

অহংকার নিন্দনীয় ও মন্দ চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। অহংকারী চায় মানুষ তাকে পছন্দ করুক, তাকে সম্মান করুক। কিন্তু সে জেনেও যেন জানে না যে, তার এমন চরিত্রই তাকে মানুষের নিকট অপছন্দনীয় ও নিন্দনীয় করে তুলছে প্রতিনিয়ত। কারণ, অহংকারী এ জিনিসটা বোঝানোর চেষ্টা করে যায় যে, তার চেয়ে অন্যরা কম গুরুত্বপূর্ণ ও কম সম্মানিত।

যদি অহংকারীর মাথায় বুদ্ধি থাকত, তাহলে সে ঠিকই বুঝতে পারত যে, বিনয়-নম্রতা হচ্ছে সম্মান ও ভালোবাসা পাওয়ার একমাত্র উপায়।

এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা রয়েছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ত বলেছেন, “যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” তাহলে আমরা কি কোন অহংকারীকে বলতে পারি যে, “তুমি জাহান্নামি“?

উত্তর হচ্ছে, না। এ রকম বলা জায়েজ হবে না। কারণ, হাদিসটি সতর্কীকরণের হাদিস। নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম “জান্নাতে প্রবেশ করবে না” বলে মূলত অহংকারীদের ভয় দেখিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তাই এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে অহংকারীদের উপর কোন হুকুম আরোম করা আমাদের জন্য জায়েজ হবে না। বরং আমরা তাদের সতর্ক করব, যেভাবে হাদীসে সতর্ক করা হয়েছে, আমরা তাদের নসিহত করব। অন্যদিকে জান্নাত-জাহান্নামের হুকুম দেওয়া সেটা আল্লাহর উপর ন্যস্ত থাকবে।

 

[ ফায়দা ]

১। অহংকারের কদর্যতা সম্পর্কে হাদিসে এবং কুরআনে ভয়াবহ সতর্কবার্তা এসেছে। আর পরিমাণে যত কমই হোক না কেন, স্বল্প অহংকারও একজন মানুষকে ধ্বংস করার জন্য যতেষ্ট।

২। এ হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, যেমনই মর্যাদায় উত্তরণের স্তর রয়েছে, তেমনই অহংকারের অবনতির কিছু স্তর রয়েছে। সব অহংকারী এক রকম হয় না। কোন অহংকারীর অহংকার তার স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়। কোনো অহংকারী প্রাথমিক স্তরে থাকে। কোনো অহংকারী আরো নিচু স্তরে গিয়ে মধ্যম স্তরে থাকে। তাই আমাদের উচিৎ মানুষের সাথে সুন্দর ও সঠিক আচরণ করা। কারো উপর নিজের মনমতো একটা মতামত বানিয়ে তার নামের সাথে ঝুলিয়ে দেব না আমরা।

 

[ করণীয় ]

অহংকারীদের অহংকারের আলামত হচ্ছে, মুখ বাঁকা করা, ভ্রু কুঞ্চিত করা। তাই অন্যদের হাসিমুখে বরণ করি, বেশি বেশি মুচকি হাসিতে নিজেদের ভেতরের অহংকারের জীবাণুকে ধ্বংস করার চেষ্টা করি।

 

[ শেষ কথা ]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে প্রার্থনা করুন তিনি যেন আমাদের অহংকারের মত নিকৃষ্ট জীবণু/রোগকে আমাদের অন্তর থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার আর সব সময় নিজেকে অহংকারমুক্ত রাখার জন্য আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে আবেদন করুন। (আমিন)

 


(1) সহিহ মুসলিম, ৯১ (আন্তর্জাতিক সংস্করণ) / সহীহ মুসলিম, ১৬৬,১৬৭,১৬৮ (হাদীস একাডেমী) / সহিহ মুসলিম, ১৬৭,১৬৮,১৬৯ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)


বইঃ হাদিস পড়ি আদব শিখি
লেখকঃ শাইখ আলী জাবির আল-ফাইফি
প্রকাশকঃ রুহামা পাবলিকেশন