অন্তরের আদব সিরিজঃ লজ্জার সৌন্দর্য

[ হাদিস ] 

ইমরান বিন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

الْحَيَاءُ لؘا يَأْتِي إِلَّا بِخَيْرٍ

❛ লজ্জাশীলতা কল্যাণ ছাড়া কোন কিছুই নিয়ে আনে না। ❜ (1)

[ ব্যাখ্যা ]

লজ্জা হলো চারিত্রিক সেই বৈশিষ্ট্য যা মানুষকে ভালো কাজ করতে এবং মন্দ কাজ ত্যাগ করতে উৎসাহিত করে।
লজ্জাশীলতা উত্তম চরিত্রের ভূষণ। আল্লাহ যার কল্যাণ চান, সে-ই এ উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হতে পারে। মানুষের এ উত্তম চরিত্র হয়তো তার তবয়ি ও জিবিল্লি হয়ে থাকে (2), অথবা তাকে চেষ্টা-সাধনা করে তা অর্জন করে নিতে হয়।
লজ্জাশীলতার অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে, এর বদৌলতে চারিত্রিক অন্যান্য উত্তম গুণাবলিও অর্জন করা যায় এবং মন্দ চরিত্র থেকে দূরে থাকা যায়। কারণ, যার লজ্জা থাকে, সে এ লজ্জায় মন্দাচার থেকে দূরে থাকে যে, মানুষ তাকে মন্দ কাজ করতে দেখবে; এবং সে এ লজ্জায় ভালো কাজ ত্যাগ করে না যে, মানুষ তাকে ভালো কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন দেখবে।

বস্তুত সর্বোত্তম লজ্জাশীলতা হচ্ছে, আল্লাহর কাছে লজ্জাবনত হওয়া। আল্লাহ থেকে লজ্জা পাওয়ার স্বরূপ হচ্ছে, মস্তিষ্ক ও মস্তিষ্কে যা আছে, তার ক্ষেত্রে নিজেকে মন্দ থেকে রক্ষা করবে; পেট ও পেটের ভেতর যা আছে, তার ক্ষেত্রে নিজেকে মন্দ থেকে রক্ষা করবে; মৃত্যু ও দুনিয়ার নশ্বরতার কথা স্মরণে রাখবে।… যে ব্যক্তি লজ্জাশীলতাকে নিজ চরিত্রের ভূষণ বানিয়ে নেবে, তার জন্য সৃষ্টিকুলের সামনে লজ্জা বজায় রাখা সহজ হয়ে যাবে।

[ ফায়দা ]

১. হাদিসটি আমাদের সামনে লজ্জাশীলতার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য তুলে ধরেছে। সর্বাবস্থায় লজ্জাশীলতাকে চরিত্রের ভূষণরূপে বজায় রাখার প্রতি উৎসাহ জুগিয়েছে। তবে আমরা যেন   লজ্জাশীল থাকা আর লজ্জা দেওয়ার মধ্যে যেন পার্থক্য নিরূপণ করে নিই। কারণ, লজ্জাশীল থাকা সব সময় প্রশংসনীয় হলেও,  কাউকে লজ্জা দেওয়া কখনো কখনো কিছু কিছু জায়গায় নিন্দনীয়।

২. এ হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, কিছু বৈশিষ্ট্য এমন যে, তা এক অবস্থায় ভালো, আবার অন্য অবস্থায় মন্দও হতে পারে। কিন্তু লজ্জাশীলতা সর্বাবস্থায় ভালো ও উত্তম (তা কেবল কল্যাণই বয়ে আনে)।

[ করণীয় ]

একাকী ও নির্জন মুহূর্তেও এ কথা মনে রেখো, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। তোমার মাঝে এ উপলব্ধি জাগ্রত থাকলে, তবেই তুমি আল্লাহর প্রতি লজ্জাবনত হতে পারবে।

[ শেষ কথা ]

আল্লাহ্‌ যেন আমাদের সকলের মধ্যে লজ্জাশীলতার মত উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)

 


(1) সহিহুল বুখারি, ৬১১৭সহিহ মুসলিম, ৩৭ (আন্তর্জাতিক সংস্করণ) / সহীহ মুসলিম, ৬২ (হাদীস একাডেমী)


বইঃ হাদিস পড়ি আদব শিখি
লেখকঃ শাইখ আলী জাবির আল-ফাইফি
প্রকাশকঃ রুহামা পাবলিকেশন