বিষয়ঃ ১
আমি’টা কে?
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম! গরমে একদম অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। ঘুমাতে গেলেও ঘুম আসেনা। আর আসলেও কিছুক্ষণ পর পর ঘুম ভেঙে যায়। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। এপাশ-ওপাশ করেই তিনটে বেজে গেল। গরমে একদম সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। গায়ের ঘামে গেঞ্জিটা পুরো সিক্ত হয়ে গেছে।
না, ❛আর রুমে থাকা যাবে না।❜ এই বলে রুম থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসলাম। আমাদের বাসার পাশেই রাস্তা। গ্রামের রাস্তা, যার কারণে এ রাত্রিবেলা লোকদের আনাগোনা নেই বললেই চলে।
বেশ কিছুক্ষণ রাস্তায় হাঁটলাম। অনেকটা ভালই লাগছিল। মুহূর্তেই মৃদু মৃদু হাওয়া শরীরের উষ্ণতা বিদূরিত করে দিল। এজন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাওয়া খাচ্ছিলাম। পরক্ষণেই লক্ষ করলাম, কেউ একজন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।
তাকে দেখে আমি বেশ অবাক হলাম! কেননা, এত রাতে এই রাস্তা দিয়ে কেউ আসা- যাওয়া করে না। কিন্তু এই লোকটা কে? আর কেনই-বা এত রাতে এদিক দিয়ে যাচ্ছে। লোকটাকে জানতে মনের মাঝে খুব কৌতুহল জাগলো। তাই কোনো কাল বিলম্ব না করে পেছন থেকে ডাক দিলাম, ‘ওহে ভাই, কে ওখানে? কোথায় যাচ্ছেন এত রাতে?’
লোকটা জবাব দিল, ❛আমি।❜
আমি গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলাম, ❛আমি কে?❜
সে আবার বললো, ❛আমি ভাই!❜
এবার একটু বিরক্তি ভাব নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম, ‘আরে ভাই, আমি’টা কে? পরিষ্কার করে বলুন কে আপনি? কোথায় থাকেন? কোথায় যাচ্ছেন?’ সে বুঝতে পারলো-আরেকটু হলেই আমি রেগে যাব। তাই এবার পরিষ্কার করে বললো, ❛ভাই, আমি রহিম। আপনাদের পাশের বাড়ির।❜
আমি তাকে ধমক দিয়ে বললাম, ❛ধুর মিয়া! এটা আগে বললে কী হত? আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘কে’, আপনি বললেন ‘আমি’, এটা কেমন কথা? আমি জিজ্ঞেস করা মাত্রই আপনার নাম বলা উচিত ছিল।❜
আমি তাকে পুরো ব্যাপারটা ভালো করে বুঝালে, ছেলেটা তার ভুল বুঝতে পারে। তারপর সেখান থেকে চলে যায়। আর আমিও আমার রুমে চলে আসি। বিষয়টি খুবই জটিল। যখন কেউ কাউকে না চিনে জিজ্ঞেস করে-কে আপনি? তখন অনেকেই এই উত্তর দেয়- ❛আমি❜।
কিন্তু এই উত্তরটা দেওয়া কতটা যৌক্তিক? কেউ যখন উত্তরে বলে-আমি, এতে কি জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি তার কাঙ্খিত বিষয়টা জানতে পারে? না, জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি তার সম্পর্কে জানতেই পারে না। কেননা, সে আপনাকে চিনে না বলেই জিজ্ঞেস করছে- ❛কে আপনি❜। কিন্তু আপনি এটা বলতে পারেন না- ❛আমি। অবশ্য আপনাকে বলতে হবে-আমি অমুক। তবেই জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি তার কাঙ্খিত বিষয়টা জানতে পারবে। আর সে যার সম্বন্ধে জানার জন্য কৌতূহলী ছিল, তার ব্যাপারে জানতেও পারবে।
এটা ছাড়াও, অনেকে দরজায় নক করে। এমতাবস্থায় যখন ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করা হয়, কে আপনি? তখন তিনি উত্তরে বলেন- ❛আমি❜।
আচ্ছা আপনার কি মনে হয়, ভেতর থেকে ওই ব্যক্তিটা আপনার বলা ❛আমি❜ শোনার মাধ্যমেই আপনাকে চিনতে পারবে? না, সে আপনাকে চিনতে পারবে না। উল্টো সে আরও বিরক্ত হবে। অবশ্যই আপনাকে বলতে হবে ❛ আমি অমুক ❜। তবেই সে আপনাকে চিনতে পারবে, অতঃপর আপনাকে দরজা খুলে ভেতরে আমন্ত্রণ জানাবে।
আর তাছাড়া সবথেকে বড় কথা হলো-ক্ষেত্র বিশেষ ❛ আমি ❜ ❛ আমি ❜ বলাটা মাকরূহ, কেননা রাসূল তা অপছন্দ করতেন। সহিহ বুখারীর হাদীসে এসেছে, জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,
❛আমার পিতার কিছু ঋণ ছিল। এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আমি নবী এর কাছে এলাম এবং দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: কে? আমি বললাম: আমি। তখন তিনি বললেন: আমি আমি, যেন তিনি তা অপছন্দ করলেন।❜ ➊
[ উৎস ]
➊ সহিহ বুখারী, ৬২৫০
বইঃ জীবনের আয়না
লেখকঃ মাহমুদ বিন নূর
প্রকাশকঃ রাইয়ান প্রকাশন