সমসাময়িক ইসলামিক জীবন – ২ঃ নো মাস্ক, নো এন্ট্রি

ধরুন, যে বন্ধুর বিয়েতে গেলেন আর অবাক না হয়ে পারলেন না, কারণ এই বন্ধুকে মোটামুটি দ্বীনদার হিসাবেই আপনি জানতেন। বিয়ের অনুষ্ঠান তো না, যেন অপচয়ের কারখানা! চারিদিকে ফুল আর ঝাড়বাতির ছড়াছড়ি। স্টেজেই মনে হয় কয়েক লাখ টাকা ঢেলে দিয়েছে। তার ওপর চলছিল নানান হিন্দুয়ানি কর্মকাণ্ড। কনেকে ঘিরে উঠতি যুবকেরা ফটোসেশন করছে।
আরো দেখলেন, রীতিমত বরের মুকুট মাথায় দিয়ে কনের গা ঘেঁষে বসে আছে! কনেকে জড়িয়ে ধরে সেলফি তুলছে! যেন তারা-ই এক একজন বর কনের। আর তার পাশে সেজেগুজে বসা মেয়েটি তাদেরই বউ!
আপনি যখনই আপনার সেই বন্ধুকে এসব নিয়ে বলতে যাবেন দেখবেন সে আপনার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকালো যেন আপনি ধর্মের গোডাউন নিয়ে বসছেন তার বিয়ের অনুষ্ঠানে বিচার করতে। আর সেই বন্ধু আপনাকে বলেও ফেলল, ‘ওই সব বিধিনিষেধ এখন পকেটেই রেখে দে। এটা বিয়ে। বিয়ে জীবনে কয়বার হয়? এত কঠোর হলে কি চলে? এইটা নিষেধ, ওইটা হারাম। ধ্যাৎ! এত নিষেধাজ্ঞা কি মেনে চলা যায়, তুইই বল!
কি বুঝলেন? তার কথার সারাংশ হচ্ছে, ‘জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোতে নিজের শখ-আহ্লাদকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। হারাম-হালাল, আদেশ-নিষেধ নিয়ে ভাবার অত সময় কোথায়?
ঠিক যেন নারীবাদি মেয়েদের মতো কথা, ‘শরীরটাও নিজের, ইচ্ছাটাও নিজের। কাকে দেবো না দেবো আমিই জানি, মৌলবাদীদের (ইসলামের মূল বিষয়গুলো নিয়ে যারা সচেতন করেন, তাঁদের) বাধাবিপত্তি মানতে যাব কেন?
ইসলাম মানার ক্ষেত্রে এ অবহেলা শুধু একজন-দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না; বর্তমান প্রায় পুরো মুসলিম সমাজের মধ্যেই অবহেলা রোগ ছড়িয়ে আছে। তাদের একটাই কথা, ‘এইসব ছাড়েন তো! এত হালাল-হারাম যাচাই করে চলা কি সম্ভব? একটু আমোদফুর্তি তো করতেই হয়, তাই না!
একটু নজর দিন! জ্বী! আপনাকে বলছি! দয়া করে আর ‘পাগলামি‘ করবেন না। আপনার কথামতো ইসলামি বিধিনিষেধ না হয় একপাশে রাখলাম। এবার, সামাজিক অথবা আইনি বিধিনিষেধগুলোর দিকে একবার নজর দিন তো!

  নিষেধাজ্ঞাটা নেই কোথায়?

☑ ধরুন, প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে পার্কে গেলেন। একটা ফুল দেখে আপনার আবেগ উথলে উঠল। প্রিয়তমার খোঁপায় গুঁজে দিতে যে-ই না ফুলে হাত দিলেন, দেখলেন পাশেই লেখা- ‘ফুল ছেঁড়া নিষেধ’
☑ অথবা একাই গেছেন পার্কে। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত। একটু ঘুমিয়ে নিতে যাবেন। লেখা- ‘ঘুমানো নিষেধ’
☑ পার্কে খুব সুন্দর একটা লেক। স্বচ্ছ পানি ঝলমল করছে। হঠাৎ দেখলেন লেকের পানিতে মাছও আছে! কী চমৎকার খলবল করছে! মনটা চনমন করে উঠল। হাতটা নিশপিশ করতে লাগল। গ্রামে থাকতে পুকুরে কিংবা খালে নেমে কত মাছ ধরেছেন! এখানেও সেই ইচ্ছাটা চাগাড় দিয়ে উঠল। যেই না ছিপ ফেললেন, গার্ড এসে খপ করে ধরে বলল, ‘মাছ ধরা নিষেধ।’
☑ শপিং মলে গেলেন। অথবা কোনো পাব্লিক প্লেসে আছেন। সিগারেট ধরাতে প্রচণ্ড ইচ্ছা হচ্ছিল। লেখা-‘ধূমপান নিষেধ’
☑ করোনাকাল চলছে। জরুরি কাজে কোনো অফিসে ঢুকতে যাচ্ছিলেন। দরজায় লেখা-‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’। মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ।
☑ নতুন একটা গাড়ি কিনেছেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সেই গাড়িতে চড়ে একটু দূরে বেড়াতে যাচ্ছেন। তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার। শর্টকাট রাস্তা খুঁজছিলেন। পেয়েও গেলেন। গাড়িটা যে-ই না ঘোরাতে যাবেন, চোখে পড়ল নিষেধাজ্ঞা- ‘ইউটার্ন নিষেধ’
☑ অনেকটা পথ ঘুরে এসে নিলেনও ইউটার্ন। পরক্ষণেই পড়ে গেলেন একটা লোকাল বাসের পেছনে। যত্রতত্র যাত্রী তুলছে দেখে সতর্ক করার জন্য হর্ন বাজাতে যাবেন, পারবেন না। হয়তো কাছেই কোথাও লেখা-‘হর্ন বাজানো নিষেধ’
☑ আরও কিছুদূর গেলেন। সামনে যানজট। আপনার দরকার দ্রুত এগিয়ে যাওয়া। গাড়িগুলোকে ওভারটেক করে যে এগিয়ে যাবেন, সম্ভব হলো না। লেখা- ‘ওভারটেকিং নিষেধ’
☑ জ্যামের মধ্যেই হঠাৎ দেখলেন একটা ফাঁকা রাস্তা। ‘ফাঁকা মাঠে গোল দিতে’ এগিয়ে যেতেই থমকে গেলেন। বিজিবির সদস্যরা রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ফাঁকা পেয়ে সুযোগ বুঝে চলে যাবেন? অসম্ভব! লেখা-‘সংরক্ষিত এলাকা। প্রবেশ নিষেধ।’
☑ এত টেনশন নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে। পানি কেনার জন্য একটা দোকানের সামনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই চোখে পড়ল-‘এখানে পার্কিং নিষেধ’
☑ ক্লান্ত হাতে গাড়ি চালাচ্ছেন। গাড়ির গতি ধীর হয়ে এসেছে। এবারও নিষেধাজ্ঞা-‘এই পথ দিয়ে ধীর গতির মোটরযান চলাচল নিষেধ’
☑ গতি বাড়াবেন? তাতেও সমস্যা। লেখা ‘গতি বাড়াবেন না। সর্বোচ্চ গতিসীমা … কি. মি.।’
☑ এরপর আরও আছে! ডানে মোড় নিষেধ। বামে মোড় নিষেধ। ওপরে ওঠা নিষেধ। নিচে নামা নিষেধ।
কি বুঝলেন ? আপনার নিজের গাড়ি কোটি টাকার ওপরে মূল্য হলেও কি নিজের মতো করে চালাতে পারছেন? পারছেন না।
এখন আপনিই বলুন। বিধিনিষেধ না মেনে যদি গাড়িটি চালান, আপনার জন্য কি মঙ্গলজনক হবে? কখনোই না। হয়তো অ্যাকসিডেন্ট করে হাসপাতালের দীর্ঘস্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যেতে পারেন। অথবা জীবনটাই কাটাতে হতে পারে ‘ক্রাচের সেনাপতি’ হয়ে চার দেয়ালের ভেতরে।
একটু বোঝার চেষ্টা করুন। ‘জীবনগাড়িটি‘ চালাতে হলেও ইসলামের বিধিনিষেধ মানা জরুরি। নয়তো দুর্ঘটনা নিশ্চিত! এই দুর্ঘটনা কেউ আটকে রাখতে পারবে না। তথাকথিত সুশীলরা যতই আপনাকে ‘স্বাধীনতা‘র দিকে উসকে দিক, সময়মতো ওরাও গুটিয়ে পালাবে। বিপদে আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে না।
কেয়ামতের কঠিন দিনের কথা মনে করুন। যেখানে ওই সব সুশীলদের কোনোই ‘দাম’ নেই! জাহান্নামের কোন বিভীষিকার মধ্যে পড়ে থাকবে, তারই তো ঠিক নেই, আপনার খবর নেবে কোথেকে? সময় থাকতে আমরা যদি না শোধরায় নিজেদের, তাহলে দুর্ঘটনা শতভাগ নিশ্চিত।
আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে সর্বক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-নিষেধ মেনে নিজেদের জীবনগাড়িটি সঠিক গন্তব্যস্থানে নেওয়ার তাওফিক দান করুন। (আমিন)

সংগৃহীত ও ঈষৎ পরিমার্জিতঃ
বইঃ কাল থেকে ভালো হয়ে যাবো
লেখকঃ মাহিন মাহমুদ