বিষয়ঃ ৮। দ্রুত কথা বলা

বিষয়ঃ ৮

দ্রুত কথা বলা ………………………………………………

কথা মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ। কখনো কথাই কোনো মানুষের পূর্ণ ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। নবীজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চলাফেরার ধরন ও অন্যান্য প্রকৃতির বাকভঙ্গিমাও ছিল স্মরণীয়। নবীজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিলো মানুষের সামনে বক্তব্য দিয়ে কোনো বিষয়কে স্পষ্ট করে তোলা।
ধরুন, আপনার কোন বন্ধু আপনার সাথে দেখা করতে এলো। এর পর দিন-কাল কেমন যাচ্ছে জিজ্ঞেস করতে না করতে সে এক এক করে খুলে বলতে লাগলো।  কিন্তু তার কথাগুলো আপনার নিকট শ্রুতিকটু লাগলো। কেননা, সে কথাগুলো খুব দ্রুত বলছিল। এতটা দ্রুত বলছিল যে, বিরক্তি এসে গেছে।
এই বিরক্তিভাব নিয়েই আপনি যদি তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কিরে, এত দ্রুত কথা বলিস কেন? এত তাড়া কীসের? ট্রেন ছুটে যাবে নাকি?’
সে আমতা আমতা করে বললো, ‘কই দ্রুত কথা বললাম, আমি তো স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছিলাম। আমি তো এভাবেই প্রতিনিয়ত বলে থাকি।’
এখানে অবাক হবার তেমন কিছু নেই কারণ অনেক মানুষ-ই বুঝে না সে যা বলছে অন্যজন সেটা সঠিক ভাবে গ্রহন করতে পারছে কি পারছে না! সে জানে না  এভাবে দ্রুত কথা বলার কারণে কথাগুলো অস্পষ্ট শোনা যায়?
আর এটাও আপনার বন্ধুর জানা নাও থাকতে পারে যে, কথা বলার সময় স্পষ্ট করে কথা বলতে হয়; নয়তো শ্রোতার কাছে কথাগুলো শ্রুতিকটু হয়। যার কারণে এক পর্যায়ে ভালো কথাগুলোও অনেকের কাছে বিরক্তিকর মনে হয়।’
এজন্য কথা বলার সময় উচিত হলো, ধীরে ধীরে স্পষ্টভাবে কথা বলা। এটাই হচ্ছে আদব। আর তাছাড়া, এটি একটি সুন্নাতও, নবীজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয় সাল্লাম) কথা বলতেন সুস্পষ্টভাবে ও সবিস্তারে। শ্রোতামাত্রই তার কথা বুঝতে পারত।
‘আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) হতে বর্ণিতঃ
কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয় সাল্লাম) এমনভাবে কথা (অর্থাৎ এতটা ধীরে ধীরে স্পষ্টভাবে)  বলতেন যে, কোন গণনাকারী গুনতে চাইলে তাঁর কথাগুলি গণনা করতে পারত। [ সহিহুল বুখারী, ৩৫৬৭আল লু’লু ওয়াল মারজান, ১৮৯১ ]
অন্য রেওয়াতে, ‘আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) হতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের মতো দ্রুত গতিতে কথা বলতেন না, বরং তিনি ধীরে সুস্থে প্রতিটি শব্দ পৃথকভাবে উচ্চারণ করে কথা বলতেন, ফলে তার কাছে বসা লোক খুব সহজেই তা আয়ত্ত করে নিতে পারত।  [ জামে’ আত-তিরমিজি, ৩৬৩৯ ]
অন্য হাদীসে, আনাস ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেনঃ
‘রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয় সাল্লাম) যখন কোন কথা বলতেন তখন তা বুঝে নেয়ার জন্য তিনবার বলতেন। আর যখন তিনি কোন গোত্রের নিকট এসে সালাম দিতেন, তাদের প্রতি তিনবার সালাম দিতেন।’ [ সহিহুল বুখারি, ৯৫ ]
[ শিক্ষণীয় বিষয় ]
…… ১। ধীরে ধীরে কথা বলা উচিৎ।
…… ২। পরিষ্কার উচ্চারণে স্পষ্ট করে কথা বলা উচিৎ।
…… ৩। বাক্যের প্রতিটি শব্দ যেন আপনার সামনের মানুষ কিংবা মজলিসের সকল শ্রোতা খুব সহজে যেন বুঝতে পারে আপনি কি ব্যক্ত করছেন।
…… ৪। প্রয়োজনে এক কথা পুনরায় ব্যক্ত করুন। রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয় সাল্লাম) বিশেষ প্রয়োজনীয় কথা তিনবার পর্যন্ত ব্যক্ত করতেন।
…… ৫। আপনি যা বলছেন সেটা যেন মসজলিসের শ্রোতাদের বিরক্তিকর কারণ না হয়ে দাড়ান এমন ভাবে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে হাদীসে।
…… ৬। দ্রুত কথা বলা অনেকটা আদবের খেলাফত।
[ শেষের কথা ]
রাসূল এর জীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে বোঝা যায়, তিনি কতটা স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতেন। অথচ আজ, অনেকেই আছে যারা খুব দ্রুত কথা বলে। এতদ্রুত কথা বলে যে, এক পর্যায়ে শ্রোতা বিরক্ত হয়ে যায়। যার কারণে শ্রোতার কাছে ভালো কথাগুলোও বিরক্তকর মনে হয়। আর তাছাড়া মুরুব্বিদের সামনে এভাবে কথা বললে, তারা বেয়াদব বলে আখ্যায়িত করে। তারা মনে করে, আপনার মাঝে আদব- কায়দা বলতে কিছুই নেই। তাই আমাদের সকলকেই এই দিকটা মাথায় রাখা উচিত। কথা বলার সময় যতটুকু সম্ভব ধীরে ধীরে স্পষ্টভাবে বলা চাই।