বিষয়ঃ ৭
স্বপ্নের কথা বলে বিপদ ডেকে আনা………………………………………………………
অজ্ঞতার কারণে কিছুটা ভুল, আপনার জীবনে বয়ে আনতে পারে বড় ধরনের বিপদ। পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই, যারা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্ন দেখে না। প্রত্যেকটা মানুষই ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নের জগতে বিচরণ করে।
এই স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা কম হয়নি। কেউ বলেছেন, মানসিক চাপের কারণে মানুষ স্বপ্ন দেখে। আবার কেউ বলেছেন, শারীরিক ভারসাম্যতার ব্যাঘাত ঘটলে, এটা হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সারাদিন মানুষ যা কল্পনা করে, সেগুলো স্বপ্ন রূপে ঘুমের মাঝে আগমন করে।
স্বপ্নের ব্যাপারে হাদিসের পাতায় আমরা দেখি আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত………
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বপ্ন মূলত তিন প্রকার। ➊
… ১. বান্দার মনের খেয়াল (অর্থাৎ, সারাদিন মানুষ যা কল্পনা করে তার প্রভাবে মানুষ স্বপ্ন দেখে।)
… ২. শয়তানের পক্ষ থেকে ভীতি প্রদর্শনমূলক কিছু (অর্থাৎ, শয়তানের কুমন্ত্রণায় মানুষ স্বপ্ন দেখে, এটা একটু ভীতিকর হয়ে থাকে।)
… ৩. আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ (অর্থাৎ, আল্লাহ তা’আলার ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে স্বপ্ন দেখা। এটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।)
আপনি যদি কোনো ভালো স্বপ্ন দেখেন, তাহলে বুঝে নিবেন―এটা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে হয়েছে। আর যদি খারাপ স্বপ্ন দেখেন, তবে বুঝে নিবেন―এটা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে।
আপনি যদি ভালো কোনো স্বপ্ন দেখেন, তাহলে আপনার ঘনিষ্ঠ ভালোবাসার মানুষ ব্যতীত অন্য কারও কাছে সেটা খোলাসা/ব্যক্ত করবেন না। আপনজন ছাড়া, স্বপ্নের কথা কাউকে বলা কল্যাণকর নয়। এ কারণেই হযরত ইয়াকুব ‘আলাইহিস সালাম তার পুত্র ইউসুফ ‘আলাইহিস সালাম-কে বলেছিলেনঃ “হে বৎস, তোমার স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদেরকে বলো না“।
স্বপ্ন যদি খারাপ হয়, তাহলে সেটাও কারও কাছে বলতে যাবেন না। কেননা, কারও কাছে স্বপ্নের কথা বললে, সে যদি এমনি এমনি কোনো একটা ব্যাখ্যা করে বসে, তবে সেটাই সংঘটিত হবে―যা সে মনে মনে ব্যাখা করেছে।
হাদীসে এসেছে, হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
❛ স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয়, তা সেভাবেই বাস্তবায়িত হয়। যখন তোমাদের মধ্যে কেউ স্বপ্ন দেখবে, তখন তা ভালো আলেম, এবং কল্যাণকামী ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারও কাছে বর্ণনা করবে না। ❜ ➋ মুসতাদুরাকে হাকিম, ৮১৭৭
আরেক রেওয়াতে আমরা দেখি, আবূ রাযীন (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত…… রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেনঃ
❛ স্বপ্নের ব্যাখ্যা না করা পর্যন্ত তা উড়ন্ত পাখির পায়ে ঝুলন্ত জিনিস সদৃশ (অর্থাৎ এটা ভালো মন্দ উভয় টার সম্ভাবনা রাখে)। তার ব্যাখ্যা করা হলে তা ছিটকে পড়ে যায় (সেটাই বাস্তবায়িত হয়)। ❜ ➌
[ শিক্ষণীয় বিষয় ]
সুতরাং, এই দু’টি হাদীস থেকে এটাই শিখলাম-
১। ভালো স্বপ্ন যা মুসলিম ব্যক্তি দেখে অথবা তাকে দেখানো হয়। ➍
২। ভাল স্বপ্ন আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সু-সংবাদ স্বরূপ। এবং জ্ঞানী ব্যক্তি অথবা শুভাকাংখী ব্যক্তি ব্যতীত আর কোন ব্যক্তির কাছে স্বপ্নের কথা প্রকাশ করবেন না। ➎
৩। আমানতদার অথবা স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে পারদর্শী ব্যক্তি ব্যতীত কারো কাছে তা ব্যক্ত না করে। ➏
৪। খারাপ / অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে কেউ যেন তা প্রকাশ না করে; কারণ যত্রতত্র যার তার কাছে স্বপ্নের কথা ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে দেখা যাবে সে মনমতো যেটাই ব্যাখ্যা করবে, সেটাই বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।
[ করণীয় ]
ঘুমের মধ্যে খারাপ স্বপ্ন দেখলে কি করণীয় তাও আল্লাহ্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট সুন্দর ভাবে ব্যক্ত করেছেনঃ
তোমাদের কেউ অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে ➐
- সে যেন বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে;
- তিনবার আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে এবং যা দেখেছে তার অনিষ্টতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করে; ( আ’ঊযুবিল্লাহ্ বা সূরা আল ফালাক্ব ও সূরা আন্ নাস পড়ে )
- সে যে দিকে কাৎ হয়ে শুয়েছিলো তা যেন পরিবর্তন করে।
- কারো কাছে কোন কিছু এ বিষয় নিয়ে আলোচনা না করা। ➑
- এবং উঠে নামায পড়ে (অন্য রেওয়াতে বর্ণিত) ➒
[ শেষের কথা ]
এখন ত আধুনিক ফিতনার যুগ। কোন কথা কোথায় বলা উচিৎ আমরা সে ক্ষেত্রেও নিজেদের নির্বুদ্ধিতার স্বাক্ষর রেখেছি। ভুলেও কখনো নিজের স্বপ্নের কথা সামাজিক মাধ্যম গুলোতে প্রচার করবেন না। আসলে এগুলা ঠিক নয়, স্বপ্ন দেখলে সেটা নিজের মাঝে রেখে দিবেন, নিজেও ব্যাখ্যা করতে যাবেন না, আর কারও কাছে বর্ণনাও করবেন না। কেননা, আপনার সামান্য ভুল, আপনার জন্য বড় ধরনের বিপদ বয়ে আনতে পারে। বি-ইজনিল্লাহ!
[ উৎস ]
➊ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯০৬ । হাদিসের মানঃ সহিহ
➋ মুসতাদুরাকে হাকিম, ৮১৭৭
➌ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯১৪ । হাদিসের মানঃ সহিহ
➍ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৮৯৮ । হাদিসের মানঃ সহিহ
➎ জামে’ আত-তিরমিজি, ২২৮০ । হাদিসের মানঃ সহিহ
➏ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯১৪ । হাদিসের মানঃ সহিহ
➐ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯০৮ । হাদিসের মানঃ সহিহ
➑ সহিহ মুসলিম, ৫৭৯৬ । হাদিসের মানঃ সহিহ
➒ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯০৬ । হাদিসের মানঃ সহিহ
সংগৃহিত ﹁
বইঃ জীবনের আয়না
লেখকঃ মাহমুদ বিন নূর
[ বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ লেখাটি একটু পরিমার্জিত এবং বর্ধিত করা হয়েছে যাতে আপনারা বিষয়টি সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে পারেন। আল্লাহ্ কবুল করুন এই প্রচেষ্টা। (আমিন) ]