বিষয়ঃ ৬
কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো অপছন্দনীয়………………………………………………
শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আমাদের ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। এ সম্মান প্রদর্শন আমাদের ইজ্জত-আব্রু বৃদ্ধি করে। আর এই শ্রদ্ধাটা হয়ে থাকে সম্মানিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই। বিশেষ করে, মা-বাবা, শ্রদ্ধেয় মুরুব্বি এবং শিক্ষকদের ক্ষেত্রে।
কারো প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য আমরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকি। তন্মধ্যে একটি হলো― বসা থেকে দাঁড়িয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে সম্মান প্রদর্শন করা। অর্থাৎ, যখন আমরা কোন মজলিসে বসা থাকি, তখন উক্ত মজলিসে কোন সম্মানিত ব্যক্তির আগমন ঘটলে, আমরা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি।
বসা ছেড়ে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করাটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সাথেই হয়ে থাকে। অর্থাৎ, শিক্ষক যখন শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে, ঠিক তখন সকল ছাত্ররা তার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যায়। আর এতে শিক্ষকও অনেক খুশি হয়ে যান। আর ছাত্ররাও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে স্বস্তি লাভ করে।
এখন আমাদেরকে দেখতে হবে, শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করলে, শিক্ষকের সম্মানার্থে শিক্ষার্থীদের জন্য দাঁড়িয়ে সালাম দেওয়া শরীয়ত সম্মত কি না?
না, এভাবে সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে সালাম দেওয়া শরীয়ত সম্মত নয়; বরং শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সালাম দিবেন এবং তারা উত্তর দিবে। কিন্তু কেউই তার সম্মানার্থে দাঁড়াতে পারবে না। এখানে শুধু শিক্ষক বলে কথা না, কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আসুন এই ব্যাপারে কয়েকটি হাদীস জেনে নিই…
আবূ মিজলায (রহমাতুল্লাহ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মু‘আবিয়াহ্ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বাইরে বের হলে তাকে দেখে ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর ও ইবনু সাফ্ওয়ান দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি বললেন, তোমরা দু’জনেই বস। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ
❛এতে যে লোক আনন্দিত হয় যে, মানুষ তার জন্য মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকুক, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নেয়।❜ ➊
অর্থাৎ, যদি কেউ এতে আনন্দবোধ করে যে, লোকেরা তাকে দেখে স্থিরভাবে দন্ডায়মান থাকুক, তাহলে সে জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নিল।
এ ব্যাপারে আরেকটি হাদীস রয়েছে, যা আনাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিতঃ
❛তিনি বলেন, সাহাবীদের নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর চাইতে বেশি প্রিয় ব্যক্তি আর কেউ ছিলেন না। অথচ তারা তাঁকে দেখে দাঁড়াতেন না । কেননা তারা জানতেন যে, তিনি এটা পছন্দ করেন না।❜ ➋
আমরা এই ভুলটা সবসময় করে থাকি। কোন সম্মানিত ব্যক্তি মজলিসে আগমন করলে তার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাই। আমাদের মস্তিষ্কে সেঁটে দেয়া হয়েছে- দাঁড়াতেই হবে, নয়তো বেয়াদব বলে গণ্য হতে হবে। একটু ভাবুন, যেই স্কুল আমাদের শিক্ষালয়, সেখানেও আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে অনৈতিক কিছু। ছোট থেকে আমাদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, শিক্ষক ক্লাসে আসলে দাঁড়িয়ে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। আর আমরা সচরাচর এটাই করে থাকি। মাধ্যমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক, এমনকি ভার্সিটি লেভেলেও এই ভুল প্রথা চালু রয়েছে।
[ শিক্ষণীয় বিষয় ]
উপরের আলোচিত দুইটা হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি –
…… ১। কারো সম্মানার্থে শিক্ষার্থীদের দাড়ানো খুবই অনুচিত এবং গর্হিত কাজ।
…… ২। এ কাজটি শরীয়াহ বিরোধীও বটে। তাছাড়া নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি বিবেক বিরোধী একটি কাজ।
…… ৩। যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আগমন করতে দেখতেন, তখন কেউ-ই তার সম্মানার্থে দাঁড়াতেন না; সেক্ষেত্রে অন্য কারো ব্যাপারে প্রশ্নই উঠে না।
…… ৪। বিষয়টি সর্বস্তরের লোকদের জানানো আমাদের সকলের নৈতিক ও শরীয়াহ কর্তৃক নির্দেশিত।
[ শেষের কথা ]
এরকম চিন্তাভাবনা আমাদের দূর করা উচিত। শিক্ষকদেরকে এটা বুঝিয়ে দেওয়া উচিত, এটা অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ। কেননা, হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে বড় ধরনের সতর্কবার্তা রয়েছে। আর তাছাড়া, সবচে’ বড় কথা হলো-এ দুনিয়ার মধ্যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কেউ ছিলো না। অথচ, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্মানার্থে সাহাবায়ে কেরাম কখনও দাঁড়াননি। কেননা, তিনি তা পছন্দ-ই করতেন না! অথচ, আজ অনেকেই এরকম রয়েছে, যারা কিঞ্চিৎ খ্যাতি অর্জন করেই নিজেকে অনেক বড় মনে করে। তারা চায়, সবাই তাদেরকে দাঁড়িয়ে সম্মান করুক। এমনকি, সে এতে প্রফুল্ল হয়; মনে মনে অনেক আনন্দিত হয়।
সে কি এটা জানে না-যদি কেউ এতে আনন্দবোধ করে যে, লোকেরা তাকে দেখে স্থিরভাবে দন্ডায়মান থাকবে, তাহলে জাহান্নামে যে তার ঠিকানা?
[ উৎস ]
➊ সহিহ তিরমিযী, ২৭৫৫। মিশকাতুল মাসাবীহ, ৪৬৯৯ । হাদীসের মানঃ সহিহ
➋ সহিহ তিরমিযী, ২৭৫৪ । হাদীসের মানঃ সহিহ
সংগৃহিত ﹁
বইঃ জীবনের আয়না
লেখকঃ মাহমুদ বিন নূর