ছেড়ার নোটের ভেতর লুকানো তাকওয়া
ধরুন, বাসের ভাড়া দিয়ে নেমে দেখলেন, ভাংতি হিসেবে হেল্পার আপনাকে যে বিশ টাকার নোটটা ধরিয়ে দিয়েছে সেটাতে তিনটা তালিজোড়া। আপনাকে নিতান্তই অসাবধান এবং সরল পেয়ে বেচারা হাসতে হাসতেই তার ‘চালাতে না পারা’ নোটখানা ধরিয়ে দিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে।
বাস থেকে নেমে আপনি রিক্সায় উঠলেন। রিক্সা ভাড়া চল্লিশ টাকা। মোক্ষম একটা সুযোগ এলো আপনার হাতে—হেল্পারের ধরিয়ে দিয়ে যাওয়া ছেঁড়া বিশ টাকার নোটটাকে অন্য একটা বিশ টাকার নোট, কিংবা দুটো দশ টাকার নোটের সাথে মিশিয়ে দিয়ে রিক্সাওয়ালার কাছে আপনি তা অনায়েশে চালিয়ে দিতে পারেন। বেচারা টের পেলে তো পেলোই, না পেলে নির্বিঘ্নে আপদটা অন্যের ঘাঁড়ে উঠিয়ে দেওয়া গেল!
কিন্তু, সেই ছেঁড়া বিশ টাকার নোট অন্য নোটের সাথে মিশিয়ে রিক্সাওয়ালাকে গছাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পারলেন না।
আপনি ভাবলেন—কেউ একজন আমার সাথে অন্যায় করেছে বলে সেই একই অন্যায় আমি অন্য একজনের সাথে করতে পারি? এমনও তো হতে পারে—এই ছেঁড়া নোট রিক্সাওয়ালাটা কোথাও চালাতে পারল না। এই নোট চলবে না বলে তাকে দোকানদার চাল না দিতে পারে, ওষুদের দোকানদার ওষুদ না দিতে পারে, এমনকি—নিজের মেয়ের জন্য একটা খেলনা কিনতে গেলেও এই ছেঁড়া নোটের কারণে তাকে ফেরত আসতে হতে পারে। আরো কত কিছু-ই না হতে পারে!
মানিব্যাগ থেকে নোটটা বের করতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত বের করা হলো না আপনার। রিক্সাওয়ালাকে চকচকে দুটো বিশ টাকার নোট দিয়ে ছেঁড়া নোটটাকে মানিব্যাগের অবহেলিত কোণটায় গুঁজে রাখলেন। (কারণ, আপনি ভাবলেন আমার এই কাজ যদি আল্লাহ্ অপছন্দ করেন, তাহলে কি করে আমি উনার সামনে দাঁড়াবো?) *
এই যে শেষ মুহূর্তের এই বোধ—এটার নাম হলো তাকওয়া। এই কাজটার সাক্ষী কেবল আপনি আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। দুনিয়ার আর কেউ এই ব্যাপারে জানে না। না আপনাকে ধোঁকা দিয়ে যাওয়া সেই বাসের হেল্পার, না যে রিক্সাওয়ালাকে আপনি ধোঁকায় ফেলতে যাচ্ছিলেন সে—কেউ না।
হতে পারে, কেবল এমন একটা অতি-ক্ষুদ্র কাজের জন্য আখিরাতে আপনি জান্নাতে পৌঁছে যাবেন। হতে পারে আপনার সেদিনকার এই কাজটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার এতো পছন্দ হয়ে যায় যে—তিনি আপনার পূর্বের আর পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন।
কখনোই কোন ভালো কাজকে তুচ্ছ জ্ঞান করে এড়িয়ে যাবেন না। হয়তো, ওই কাজটাই হয়ে উঠবে আখিরাতে আপনার নাজাতের চাবিকাঠি।
[ কি বুঝলাম? ] *
- তাকওয়ার মর্ম বুঝলাম।
- অন্যায় নিজেরে সাথে হলো বলে অন্যের সাথে করার অধিকার আমাদের নেই।
- নিজের চেয়ে অন্যের উপর জুলুম না করার মানসিকতা শিখলাম।
- কিভাবে আল্লাহ্র নিকট প্রিয়ে হয়ে যাওয়া যায়, তা শিখলাম।
- অতি ক্ষুদ্র কাজ ও আখিরাতে নিয়ে যেতে পারে তা জানলাম।
- গুনাহ মাফের উপায় ও পেলাম।
- গোপনে ভালো কাজ করা যায়, তাও শিখলাম।
- তুচ্ছ জ্ঞান করে কোন কিছুই এড়িয়ে নিজের নাজাতের চাবিকাটি হারানো যাবে, সেটাও জানলাম।
লেখকঃ আরিফ আজাদ
* এই চিহ্নিত লেখাগুলো আমার নিজের।