[ হাদিস ]
আবূ আবদুল্লাহ আল-জাদালী (রহঃ) থেকে বর্ণিত… তিনি যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চরিত্র-মাধুর্য সম্বন্ধে আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-কে প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেনঃ
لَمْ يَكُنْ فَاحِشًا وَلاَ مُتَفَحِّشًا وَلاَ صَخَّابًا فِي الأَسْوَاقِ وَلاَ يَجْزِي بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَصْفَحُ
❝ তিনি কখনো অশ্লীল ও কটুভাষী (যে মন্দ ও গালি দিয়ে খারাপ ভাষায় কথা বলে) ছিলেন না, ভান করেও তিনি অশ্লীল ব্যবহার করেননি। তিনি কখনো বাজারে গিয়ে হট্টগোল (গলা উঁচু করে জোর গলায় কথা বলা অথবা চিৎকার) করতেন না। এবং তিনি অন্যায়ের দ্বারা অন্যায়ের প্রতিশোধ নেননি (অর্থাৎ মন্দের মোকাবিলায় মন্দ আচরণ করতেন না)। বরং তিনি উদার মন নিয়ে ক্ষমা করে দিতেন এবং তা উপেক্ষা করতেন। ❞ (1)
[ ব্যাখ্যা ]
এ হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট উঠে এসেছে। আর তা অনুসরণ করার আদেশ দিয়ে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন কুরআনের ৩৩ নম্বর সূরা আল-আহযাবের ২১ নম্বর আয়াতে বলেনঃ
لَقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِىۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنۡ
❛ তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে…❜ (2)
যিনি তাঁর উম্মতকে অনবরত উত্তম চরিত্রের চরিত্রবান হওয়ার আদেশ করেছেন, তিনিই তো উত্তম চরিত্রে সবার নেতা ও শিরোমণি হবেন, এটাই ত স্বাভাবিক। তা ছাড়া সিদ্দিক-কন্যা আয়িশা সিদ্দিকা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) নবিজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চারিত্রিক বর্ণনা করতে গিয়ে এক কথায় বলেনঃ
خُلُقُهُ الْقُرْآنَ
❛ তাঁর চরিত্র হচ্ছে কুরআন।❜ (3)
[ হাদিস থেকে শিক্ষা ]
আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) যেমন বলেছিলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চরিত্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ
১। তিনি ﷺ অশ্লীল বা কটুভাষী ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি কখনো অশ্লীল কথা মুখে আনতেন না, কঠোরভাবে ঝগড়ায় লিপ্ত হতেন না। বরং তাঁর কথা ছিল নরম ও হৃদয় বিগলিত করে দেওয়ার মতো। তাঁর কথা তাঁর সাহাবিদের তো মুগ্ধ করে রাখতই, তাঁর শত্রুদেরও আকর্ষণ করত।
২। তিনি ﷺ বাজারে চেঁচামেচি বা উচ্চ আওয়াজে কথা বলতেন না। অথচ বাজারে গিয়ে অনেকেই উচ্চ আওয়াজে কথা বলে, যা বর্তমান পরিস্থিত দেখলে মনে হবে স্বাভাবিক দৃশ্য বটে। কিন্তু তিনি এমন কাজও তিনি কখনো করেননি। যদি তিনি বাজারে স্বাভাবিক স্বরে কথা বলে থাকেন, তাহলে অন্য ক্ষেত্রে কেমন ছিল তাঁর কন্ঠস্বর? একটু ভেবে দেখুন।
৩। নবিজি ﷺ যখন মন্ধ কথা বা মন্ধ আচরণের সম্মুখীন হতেন, তখন তিনি সেটার জবাবে মন্ধ কিছু করতেন না; বরং সে ব্যক্তিকে যেতে দিতেন এবং ক্ষমা করে দিতেন। এ হচ্ছে সে মহান ব্যক্তিত্বের কয়েকটি বৈশিষ্ট, যার সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলছেন কুরআনের ৬৮ নম্বর সূরা আল-কলম এর ৪ নম্বর আয়াতেঃ
وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيۡمٍ ٤
❛ নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। ❜ (4)
[ করণীয় ]
- আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, প্রিয় নবিজি ﷺ এর আদর্শের অনুসরণ করা, তাঁরই প্রদর্শিত পথে চলা।
- আমরা এমন কোন প্রভাব বিস্তারকারীর প্রভাবাধীন হবো না, যে ভুল করে থাকে।
- আমরা বাজারে গিয়ে গাধার মত জোরে জোরে কথা বলে নিজেদের জাহির না করে বরং স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলব, যেমন আমাদের নবিজি ﷺ করেছেন সারা জীবন।
- জবানকে কটু ও মন্দ কথা থেকে যে কোন মূল্যে বিরত রাখতে হবে। মনে রাখবেন “জোর যার মুল্লক তার” এই বাক্য বেমানান রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে।
- উপেক্ষা করা শিখতে হবে অনেক কিছুই এবং ক্ষমা করার মানসিকতা রাখতে হবে এবং চর্চা করতে হবে।
- উত্তম চরিত্রের শ্রেষ্ঠ বাস্তব উদাহরণ হলেন আমাদের নবি করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুতরাং তাকে অনুকরণ করলেই আমরা এ উত্তম বৈশিষ্ট্যগুলো নিজেদের মধ্যে আনায়ন করতে পারব।
[ শেষের কথা ]
আমাদের কে সর্বক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহর উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো অনবরত চর্চা করতে হবে, তবে আমরা ইন শা আল্লাহ্ আমরা নিজেদের মধ্যে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম আল্লাহর বিশেষ রহমতে, বিইযনিল্লাহ!
(1) জামে’ আত-তিরমিজি, ২০১৬ । হাদিসের মানঃ সহিহ
(2) সূরা আল-আহযাব, (৩৩ঃ২১)
(3) মুসনাদু আহমাদ, ২৪৬০১ । হাদিসের মানঃ সহিহ
(3) সূরা আল-কলম, (৬৮ঃ৪)
বইঃ হাদিস পড়ি আদব শিখি
লেখকঃ শাইখ আলী জাবির আল-ফাইফি
প্রকাশকঃ রুহামা পাবলিকেশন