জবানের আদব সিরিজঃ নেক কাজ ও বদ কাজ

[ হাদিস ]

‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত…… রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

 عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ صِدِّيقًا وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا

❛ সত্যকে ধারণ করা তোমাদের একান্ত কর্তব্য। কেননা সততা নেক কর্মের দিকে পথপ্রদর্শন করে আর নেককর্ম জান্নাতের পথপ্রদর্শন করে। কোন ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বললে ও সত্য বলার চেষ্টায় রত থাকলে, অবশেষে আল্লাহর নিকট সে সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। আর তোমরা মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকো! কেননা মিথ্যা পাপের দিকে পথপ্রদর্শন করে। আর পাপ নিশ্চিত জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করে। কোন ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বললে এবং মিথ্যার উপর অবিচল থাকার চেষ্টা করলে, অবশেষে সে আল্লাহর নিকট মিথ্যাবাদীরূপে লিপিবদ্ধ হয়। ❜ (1)

 

[ ব্যাখ্যা ]

নবিজি ﷺ – এর মানহাজ (পদ্ধতি) হচ্ছে, যখন তিনি কোনো কাজের আদেশ করেন, তখন আমরা বুঝতে পারি যে, পক্ষান্তরে তিনি সে কাজের বিপরীতটা নিষিদ্ধ করেছেন। কখনো তিনি কোনো কিছু নিষিদ্ধ করলে তখন সেটার বিপরীতটা করা আবশ্যক করেছেন।

কিন্তু নবিজি ﷺ এখানে কেবল একটা দিক উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি সত্য বলার আদেশ করলেই চলত। আমরা বুঝতে পারতাম, সত্য বলা আবশ্যক ও অবধারিত আর মিথ্যা বলা নিষিদ্ধ। তিনি বিষয়টা আমাদের উপর ছেড়ে না দিয়ে; বরং স্পষ্ট উচ্চারণে মিথ্যা বলা হারাম করে দিয়েছেন। …… এমনটা করার কারণ হচ্ছে, সত্য বলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর মিথ্যা বলা কতটা গুরুতর, যেন আমরা সেটা বুঝতে পারি।

  • সত্য হলো নেক কাজ ও সদাচরণের দরজা। আর এই দুই জিনিষ দ্বারা সজ্জিত বান্দাকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে ইন শা আল্লাহ্‌। (সুবহানাল্লাহ)
  • পক্ষান্তরে মিথ্যা বড় বড় পাপ কাজের দরজা। আর এসব পাপ পাপকারীকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়। (নাউজুবিল্লাহ)

মিথ্যার আরেকটি দরজা আছে, যা থেকে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। সেটা হচ্ছে, মানুষকে হাসানোর জন্য বলা মিথ্যা কথা। নবিজি ﷺ  এ রকম মিথ্যা কথার ব্যাপারে বলেনঃ

وَيْلٌ لِلَّذِي يُحَدِّثُ بِالْحَدِيثِ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ فَيَكْذِبُ وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ

❛ সেই লোক ধ্বংস হোক যে মানুষদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে নিপাত যাক, সে নিপাত যাক। ❜ (2)

তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, সব সময় সত্যের পথে চলা, সত্যবাদীদের সঙ্গী হওয়া, মিথ্যা থেকে নিজেকে দূরে রাখা। অন্যকে নিয়ে মিথ্যা বলতে বাধ্য করে এমন খারাপ কাজ থেকেও দূরে থাকা আমাদের কর্তব্য।

 

[ ফায়দা ]

১। এই হাদিসগুলো আমাদের কাছে সত্য বলার গুরুত্ব ও মিথ্যা বলার কদর্যতা বর্ণনা করে।

২। কিছু কাজ আছে, যা মানুষকে অনেক উঁচু মর্যাদায় নিয়ে যায়। তন্মধ্যে সত্যবাদীতা অন্যতম। পক্ষান্তরে, কিছু কাজ এমন আছে, যা মানুষকে অধঃপতনের অনেক নিচু স্তরে নিয়ে যায়। তন্মধ্যে অন্যতম অধঃপতনকারী হচ্ছে মিথ্যা বলা।

 

[ করণীয় ]

১। সত্য বলার গুরুত্ব ও মিথ্যা বলার পরিণাম সম্পর্কে এই হাদিসগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে বেশি বেশি সকলের মাঝে।

২। নিজে সত্য কথা বলবেন-ই সেই সাথে আমাদের আশেপাশের মানুষ এবং নিজ পরিবারের সবাইকে সত্য কথা বলার উৎসাহ দিতে হবে।

৩। মিথ্যা ছাড়ার জন্য তাগিদ দিতে হবে কুরআন ও হাদিসের আলোকে এবং সেই সাথে এর পরিণাম সম্পর্কে বেশি বেশি আলোচনা করতে হবে।

বিশেষ করে, নিষ্পাপ শিশুদের যদি ছোটকাল থেকেই এই সব বিষয়ে যত্নবান হয় এবং বুঝিয়ে দিতে পারি তাহলে ইন শা আল্লাহ্‌ তারা সর্বদায় সত্যবাদীর পথে থাকবে এবং সেই সাথে অন্যকেও উৎসাহিত করতে জানবে। এর ফলে আমরা সকলেই অধিক সওয়াবও লাভ করব বিইজনিল্লাহ।

 


(1) সহিহুল বুখারি, ৬০৯৪সহীহ মুসলিম, ৬৫৩৩ । হাদিসের মানঃ সহিহ

(2) জামে’ আত-তিরমিজি, ২৩১৫ । হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ


বইঃ হাদিস পড়ি আদব শিখি
লেখকঃ শাইখ আলী জাবির আল-ফাইফি
প্রকাশকঃ রুহামা পাবলিকেশন