বিষয়ঃ ৫
তুমি ‘যদি’ চাও
দু’আ হলো ইবাদতের মগজ! দু’আর মাধ্যমে ইবাদত পূর্ণতা পায়। আমরা সবসময় দু’আর মুখাপেক্ষী। দু’আর মাঝে মন খুলে আল্লাহ তা’আলার কাছে চাওয়া যায়। মন খুলে আল্লাহ তা’আলার সাথে কথা বলা যায়। আমরা যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয় আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’আর মাধ্যমেই চেয়ে থাকি।
আমরা প্রতিটা মানুষ চাই, আমাদের দু’আ যেন আল্লাহ তা’আলার কাছে মাকবুল হয়। আমরা দু’আতে সবসময় জাহান্নামের আগুন থেকে পানাহ চেয়ে থাকি। এবং সবসময় জান্নাতের কামনা করি। আল্লাহ তা’আলার কাছে আর্জি করি, “হে আল্লাহ! আমাকে জান্নাত নসিব করুন।” এবং আল্লাহ তা’আলার কাছে যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয় চেয়ে থাকি। এটাও বলি “হে আল্লাহ! আমাদের উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা করে দিন। উত্তম জীবনসঙ্গিনী দান করুন। সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করুন। সম্মান, ইজ্জত, আব্রু বৃদ্ধি করে দিন। জালেমের জুলুম থেকে রক্ষা করুন-ইত্যাদি ইত্যাদি।”
সাধারণত এভাবেই আমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’আ করে থাকি। কিন্তু কেউ কেউ এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহ তা’আলার কাছে কোন কিছু চাওয়ার পূর্বে বলে,
“হে আল্লাহ! তুমি যদি চাও, তাহলে আমাকে কল্যাণ দান কর। তুমি যদি চাও, তাহলে আমার গুনাহ মাফ করে দাও। তুমি যদি চাও, তাহলে এটা থেকে আমাকে রক্ষা করো। তুমি যদি চাও, তাহলে এই গাড়িটা কিনার তাওফিক দান করো। তুমি যদি এটা আমার জন্য কল্যাণকর মনে করো, তাহলে সেটাই আমাকে দাও।”
উপরোল্লিখিত বাক্যে আল্লাহ তা’আলার কাছে অনেকেই চেয়ে থাকে। এবং প্রত্যেক বাক্যের মধ্যে “যদি” শব্দ টা যোগ করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তা’আলার কাছে কোন কিছু চাইতে যদি শব্দ যোগ করা নিষিদ্ধ। কেননা, আল্লাহ তা’আলার জন্য কোন বাধ্যকারী নেই। সুতরাং, “যদি” শব্দ যোগ করলে দু’আ তো কবুল হবেই না; উল্টো আরও গুনাহ হবে!
দু’আ করতে হবে দৃঢ়তার সাথে। এ ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে একটি হাদীস রয়েছে―
আনাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত…… তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
{ إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلْيَعْزِمْ فِي الدُّعَاءِ وَلاَ يَقُلِ اللَّهُمَّ إِنْ شِئْتَ فَأَعْطِنِي فَإِنَّ اللَّهَ لاَ مُسْتَكْرِهَ لَهُ }
❛তোমাদের কেউ যখন দু‘আ করে সে যেন দৃঢ়তা প্রকাশের সাথে দু‘আ করে। আর সে যেন না বলে, “হে আল্লাহ! যদি তুমি ইচ্ছা কর তবে আমাকে দান কর”। কেননা মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর জন্য কোন বাধ্যকারী নেই।❜ ➊
এখন হয়তো আপনি বলতে পারেন, ‘যদি‘ উল্লেখ না করে কীভাবে দু’আ করবো? খুব সহজ ও সাবলীলভাবে! এভাবে দু’আ করতে হবে, “হে আল্লাহ! আমার চাওয়ার মধ্যে ভুল-ত্রুটি হতে পারে কিন্তু আপনার দেয়ার মধ্যে তো ভুল নেই। আপনি আমায় এমন কিছু দিয়েন না, যা আমাকে বেঈমান বানায়, আপনার থেকে গাফেল করে ফেলে; বরং যা আমার জন্য কল্যাণকর, তা আমাকে দান করুন। আর আমি তো সর্বদা আপনারই মুখাপেক্ষী। নিশ্চয়ই আপনি সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ জ্ঞান রাখেন। তাই, আমি যদি কখনও ভুল করে কিছুর আশা করি, যা আমার জন্য অকল্যানকর-তা থেকে আমাকে বিরত রাখেন এবং ধৈর্য ধারণের তৌফিক দান করেন।
আমার জানা অজানা পাপের জন্য আমি তওবা করছি, ক্ষমা চাচ্ছি। আমার নফসকে আপনার কাছে সোপর্দ করছি। সকল প্রকার শয়তানের প্ররোচনা, গীবত, হিংসা ও শিরক থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনার ক্ষমা-ই আমার একমাত্র কাম্য। নিশ্চয় আপনি মহান ক্ষমাশীল।”
[ শিক্ষণীয় ব্যপার ]
…… ১। দু’আ করতে হবে দৃঢ়তার সাথে। কেননা মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর জন্য কোন বাধ্যকারী নেই। ➊
…… ২। দু’আ করতে হবে আগ্রহের সাথে (অর্থাৎ, পরিপূর্ণ আস্থার সাথে) । কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাকে যা দান করেন তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট তেমন কোন বিশাল জিনিস নয়। ➋
…… ৩। আল্লাহ তা‘আলা মহান কারিগর, তিনি যা চান তাই করেন। ➌
…… ৪। চাওয়ার জায়গা তো একটাই। চাওয়ার মত চাইলে তিনি কখনো কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। চাইতে হবে চাওয়ার মত।
…… ৫। ভালো জিনিষ চাইতে গিয়ে যেন “যদি” শব্দ ব্যবহার করে গুনাহ না করে বসি।
[ শেষের কথা ]
মোটকথা, ‘যদি‘ শব্দটা আল্লাহ তা’আলার সাথে সংযুক্ত করা যাবে না। তবে বান্দার ক্ষেত্রে সংযুক্ত করা যাবে। বান্দার কর্মের ক্ষেত্রে ‘যদি‘ শব্দ যোগ করলে কোনো সমস্যা নেই। যেমন, সে যদি আমার জন্য কল্যাণকর হয়, তাহলে তার সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার নিকট এটা বলা যাবে না-আপনি যদি চান, তাহলে তার সাথে আমার বিবাহের ব্যবস্থা করে দিন। কেননা, এখানে ‘যদি‘ শব্দ আল্লাহর সাথে যোগ করা হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা আল্লাহ্র মুখাপেক্ষী, তিনি নন। সুতরাং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিকট অত্যন্ত বিনয়াবত হয়ে ক্রন্দরভরা হৃদয় নিয়ে দৃঢ়তা ও পূর্ণ আস্থা এবং এই বিশ্বাসের সাথে চাইতে হবে যে আমার আল্লাহ্ আমাকে অবশ্যই আমার চাওয়া পূরণ করবেন। তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লাহ্!
[ উৎস ]
➊ সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বরঃ ৬৭০৪ । হাদিসের মানঃ সহিহ
➋ সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বরঃ ৬৭০৫ । হাদিসের মানঃ সহিহ
➌ সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বরঃ ৬৭০৬ । হাদিসের মানঃ সহিহ
সংগৃহীত ﹁
বইঃ জীবনের আয়না
লেখকঃ মাহমুদ বিন নূর