বিষয়ঃ ৩। কেউ স্বীয় বসার স্থান হতে উঠে গিয়ে পুনরায় ফিরে এলে

বিষয়ঃ ৩

কেউ স্বীয় বসার স্থান হতে উঠে গিয়ে পুনরায় ফিরে এলে…

ধরেন, এক বড় ভাইয়ের ওলিমার দাওয়াত খেতে গেলেন। অনুষ্ঠান শুরু হতে দেরি হচ্ছে। অনুষ্ঠান শুরু না হওয়া অবধি খাবার দেওয়া হবে না। দু’আর আয়োজনের মাধ্যমে খাবার দেওয়া শুরু হবে। তাই অপেক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই। অপেক্ষা করতে লাগলেন। প্রায় ঘন্টাখানেক চেয়ারে বসে আছেন। আশেপাশে অনেক মানুষই দাঁড়িয়ে আছে। আসন সীমিত হওয়ায় কেউ জায়গা পেয়েছে আর কেউ পায়নি। সবাই নিজ নিজ আসন ধরে রেখেছে। সবাই জানে-উঠে গেলে আর আসন পাবে না।
বসে থাকতে থাকতে কেটে গেল দীর্ঘক্ষণ। অবশেষে দু’আর আয়োজন শুরু। দু’আ শেষে খাবার দেওয়া শুরু হলো। ঠিক সেই সময় আপনার পাশের সিটের একজনের ইস্তিঞ্জার জরুরত হলো। এখন না গেলেও তার চলবে না। সে আপনাকে বললো, ❛ভাই, আমার সিটটা একটু দেইখেন তো, আমি আসছি।
সে তার জরুরাত পুরা করতে চলে গেল। ঠিক সেই সময় আপনার একটা ফোন আসল। আপনি ফোনে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। আর এই ফাঁকে কেউ একজন এসে সেই সিটে বসে গেল। আপনি খেয়াল করেন নি-কখন সে আসলো আর কখন সে বসলো। যে লোকটি তার জরুরাত সেরে আসতে গিয়েছিল ফিরে এসে দেখল, তার জায়গায় আরেকজন বসে আছে! এটা দেখেই তার মেজাজ পুরো গরম। এত কষ্ট করে সে জায়গাটি ধরে রেখেছিল, এখন সেখানে আরেকজন এসে বসে পড়ল! ব্যপারটা সে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। ভদ্রভাবে ওই লোকটাকে বললো, ❛ভাই, এটা আমার সিট, আমি ইস্তেঞ্জায় জরুরাত সারতে গিয়েছিলাম। এই ভাই কে জিজ্ঞেস করে দেখুন।
আপনার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বললো। আপনিও তার কথায় সায় দিয়ে বললেন, ❛জ্বি ভাই, সিটটা ওনার-ই।
কিন্তু আপনার কথায় কোনো ভ্রূক্ষেপ না করে, ঐ ব্যক্তি বেঁকে গেল এবং বললো, ❛এই সিট আমি খালি পেয়েছি; তাই বসেছি। সুতরাং, সিটটা এখন আমার।
তাদের মাঝে পরস্পর কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। যে আগে থেকে বসা ছিল সেও ছাড় দিচ্ছে না, আর যে পড়ে এসে বসেছে সেও ছাড় দিচ্ছে না। একজন তার ন্যায্য দাবি থেকে সরে আসছে না, আর অন্যজন বলছে, ❛আমি জায়গা পেয়েছি, আমি বসেছি।❜
কথা কাটাকাটি করতে করতে এক পর্যায়ে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। তারপর শুরু হল হাতাহাতি। একপর্যায়ে মারামারির মত অযাচিত কর্মে লিপ্ত হলো দু’জনে। কর্তৃপক্ষ এসে ঝগড়া থামালো। আপনিও পাশেই ছিলেন আর তখন আপনার মনে পড়ল আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদিস খানি তাদের মাঝে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য ওই ব্যক্তিকে বললাম (যে জায়গা খালি পেয়ে এসে বসেছে), ❛দেখুন ভাই, যিনি আগে এখানে বসা ছিলেন, তিনিই এই সিটের হকদার। এই সিটে তার অধিকার রয়েছে। আপনি চাইলেই এখানে বসে থাকতে পারেন না।❜
আর তাছাড়া, এ ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই শিক্ষা দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَنْ قَامَ مِنْ مَجْلِسِهِ ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهِ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ

❛ যে লোক তার জায়গা ছেড়ে উঠে যাওয়ার পর আবার সেখানে ফিরে আসে, তাহলে সে সেই স্থানে (পুনরায় বসার ব্যাপারে) বেশি হকদার। ❜ ➊
লোকটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদিস শুনে চুপ হয়ে গেলন এবং সেখান থেকে চলে গেলেন।
[ শিক্ষণীয় ব্যাপার ]
…১। ইসলামও আমাদের এই শিক্ষা দিচ্ছে, যে আগে থেকে বসা ছিল সে-ই ওই সিটের হকদার।
…২। উড়ে এসে জুড়ে বসবেন-এমনটা ইসলাম সমর্থন করে না। তবে আমাদের সমাজে এরকম ঘটনা অহরহ হচ্ছে। শুধু বিয়ে বাড়িতেই এমনটা হয়-তা কিন্তু নয়। ক্লাসে বসতে গেলেও এমন হয়, বিভিন্ন মজলিসে গেলেও এমন হয়। এমন বিশৃঙ্খলা এড়াতে ইসলাম আমাদেরকে সুন্দর সমাধান দিয়েছে। আর তা হলো, যে এতোক্ষণ যাবত একটা জায়গায় বসা ছিল, কোনো কারণে যদি সে উঠে চলে গিয়ে আবার ফিরে আসে, তবে সে তার আগের জায়গায় বসার অধিক হকদার। কেউ একজন অনেক্ষণ ধরে কোনো এক জায়গায় বসা ছিল, কিছুক্ষণ পর তার জায়গায় আরেকজন বসতে চাইলেও বসতে পারবেন না যতক্ষণ যিনি বসে ছিলেন তিনি অনুমতি না দেন।
…৩। আবার কেউ কেউ তো আছেন, ক্ষমতার দাপটে অন্যকে তার সিট থেকে তুলে সেখানে বসে যায়। এটাও একটা অনুচিত কাজ। এটাও ইসলাম সমর্থন করে না। এ ব্যপারে হাদীসে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আছে। ইবনু উমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিতঃ
❛নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন লোককে তার বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে অন্য লোক বসতে নিষেধ করেছেন। তবে তোমরা বসার জায়গা প্রশস্ত করে দাও এবং ব্যবস্থা করে দাও। ইবনু ‘উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কেউ তার জায়গা থেকে উঠে যাক এবং তার স্থানে অন্যজন বসুক তা পছন্দ করতেন না।❜ ➋
[ করণীয় ]
তাই আমাদের উচিত-কেউ যদি এসব বলে, ❛ভাইয়া, এই সিটটা আমার, পূর্ব থেকেই আমি এখানে বসা ছিলাম।❜ তখন ওই সিটটা ছেড়ে দেওয়া উচিত। বেঁকে গিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। সিট ছেড়ে দেওয়াই আদব।

[ উৎস ]
সহিহ মুসলিম ৫৫৮২, আবু দাউদ ৪৮৫৩ । হাদিসের মানঃ সহিহ
➋ সহিহ বুখারী ৯১১, ৬২৬৯, ৬২৭০ । হাদিহের মানঃ সহিহ

সংগৃহীতঃ

বইঃ জীবনের আয়না
লেখকঃ মাহমুদ বিন নূর