বিষয়ঃ ৪। রোদ ছায়ার মাঝামাঝি বসা

বিষয়ঃ ৪

রোদ ছায়ার মাঝামাঝি বসা

গরম পেরিয়ে শীত আসে। আর শীত আসলেই কম্বল হয়ে যায় সবার সাথী। গরম কাপড় ছাড়া একটা মুহূর্তও থাকা যায় না। শীতকে উপেক্ষা করে উষ্ণতার খোঁজে সবাই ছুটে। তবুও আল্লাহ প্রদত্ত এই শীত থেকে কেউ আত্মগোপন করতে পারে না। যেখানেই যাক, শীত তাকে একটুখানি ছুঁয়ে দিবেই। অবশ্য আমাদের দেশে হাড় কাঁপানো শীত অন্যান্য দেশের তুলনায় কম থাকলেও তাও আমাদের খবর হয়ে যায়।
শীত আসলে মানুষের গোসল অনিয়মিত হয়ে যায়। একদিন গোসল করলে, অপরদিন করতে মন চায় না। ঠান্ডায় সবসময় কাবু হয়ে থাকি। একদিন দুইদিন পর গোসল করলেও, সেটা হয় দুপুরবেলা। গোসল করলেও ঠান্ডা থেকে বাঁচতে দ্রুত রোদে এসে বসে পড়ি। বসে বসে রোদ থেকে উষ্ণতা নিতে থাকে। রোদ পোহাতে পোহাতে পরক্ষণেই মাথা এবং চেহারা গরম হয়ে যায়। যার কারণে আবার ছায়ায় আসতে হয়। যখন ছায়ায় আসা হয়, তখন আবার গায়ে ঠান্ডা লাগে। কিন্তু মাথা এবং চেহারা গরম-ই থেকে যায়। এজন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা অনেকেই কি করি? ছায়া এবং রোদের মাঝামাঝি বসে থাকি। মাথাটুকু রাখি ছায়ায়, আর পুরো শরীর রাখি রোদে। এতে আমরা প্রশান্তি লাভ করি।
রোদের দেখা মিললেই শীতের মৌসুমে এই কাজটা আমরা অনেকেই করে থাকি। কিন্তু আমরা এটা কি জানি, এই কাজটা নিষিদ্ধ? না, আমরা অনেকেই এটা জানি না। এটা যে নিষিদ্ধ, তা আমরা হাদীস থেকে জেনে নিতে পারি।
আবূ হুরায়রাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত… আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
তোমাদের কেউ রোদে বসা অবস্থায় সেখানে ছায়া এলে তার দেহের কিছু অংশ রোদে এবং কিছু অংশ ছায়ায় পড়ে গেলে সে যেন সেখান হতে উঠে যায়।❜ ➊
এ ব্যাপারে আরেকটি হাদীস রয়েছে, ‘আমর বিন আসওয়াদ আনসী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত… তিনি বলেনঃ জনৈক সাহাবী বলেছেন –

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَجْلِسَ بَيْنَ الضِّحِّ وَالظِّلِّ ، وَقَالَ : مَجْلِسُ الشَّيْطَانِ

‘‘রাসূল (সা.) রোদ ও ছায়ায় তথা শরীরের কিছু অংশ রোদে আর বাকি অংশ ছায়ায় এমনভাবে বসতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি আরো বলেছেনঃ এটি হচ্ছে শয়তানের বসা’’ ➋
আমরা উভয় হাদীস পর্যালোচনা দেখতে পাই রোদ ছায়ার মাঝামাঝি বসতে নিষেধ করা হয়েছে।
[ শিক্ষণীয় ব্যাপার
…… ১। প্রথম হাদীস অনুযায়ী বোঝা যায় এটা মাকরূহ।
…… ২। আর দ্বিতীয় হাদীস অনুযায়ী বোঝা যায় এটা শয়তানের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে। সুতরাং, এরূপ বসা থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে।
…… ৩। এরূপ স্থানে বসতে শয়তান মানুষকে উৎসাহিত করে। কারণ শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু আর সে তো চায় আমরা তার অনুসারী হয়।
…… ৪। রৌদ্র ছায়ায় বসলে মানুষের শরীরে প্রাকৃতিক প্রভাব পড়বে যাতে তার মারাত্মক ব্যাধি হতে পারে।
…… ৫। এরূপ স্থানে বসলে দেহে দু’টি রং বা বর্ণের প্রতিফলন ঘটে যা কেবল শয়তানের স্বভাব।
তাছাড়া অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় ডাক্তারগণ গবেষণা করে বের করেছেন, শরীরে কিছু অংশ রোদে আর কিছু অংশ ছায়ায় থাকলে, মানুষের দেহে ও মেযাজে যথেষ্ট ক্ষতি হ’তে পারে। এতে কুষ্ঠরোগ ও চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া মানসিক দিক দিয়ে মেযাজ খিটখিটে ও চঞ্চল হয়ে পড়ে। ফলে কোন ভালো কাজে লিপ্ত থাকে না। তাই এরূপ স্থানে বসতে নিষেধ করা হয়েছে। ➌
এক কথায় কোন ভাবেই শয়তানের সাদৃশ্য কাজ করা যাবে না।  তবে কেউ যদি শুধু ছায়ায় অথবা শুধু রোদের আলোতে বসে, তবে কোনো সমস্যা নেই।

[ উৎস
➋ মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বরঃ ১৫৪৫৯ । হাদিসের মানঃ সহিহ
➌ মিরকাতুল মাফাতীহ, ৪৭২৫ নং ও ৪৭২৬ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য

সংগৃহিত﹁
বইঃ জীবনের আয়না
লেখকঃ মাহমুদ বিন নূর