[ হাদিস ]
‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘আম্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, …… নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ
❛ চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়।
-
-
-
-
-
- ১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে;
- ২. কথা বললে মিথ্যা বলে;
- ৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং
- ৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি করে। ❜ (1)
-
-
-
-
[ ব্যাখ্যা ]
হাদিসে বর্ণিত এ সকল স্বভাব মন্দ। বরং এগুলো এতটাই নিকৃষ্ট দোষ ও বৈশিষ্ট্য যে, এ সবই মুনাফিকির আলামত। তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, এ সব থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। যেভাবে আমরা আমাদের কাপড় ময়লা ধুয়ে পরিষ্কার করি, তেমনি আমাদের এ সব মন্দ স্বভাবের কলঙ্ক থেকে আমাদের চরিত্র ও অন্তরকে পরিষ্কার রাখতে হবে।
- ১। কেউ আপনার কাছে কোন কিছু আমানত রাখলে, তার খেয়ানত কোন অবস্থায় করবেন না। বরং আমাদেরকে আমাদের প্রিয় নবিজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মত আমানতদার হতে হবে, যিনি সকলের নিকট ‘আমিন’ (আমানতদার) হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
… - ২। মিথ্যা ও আমাদের মাঝে দু’টি রক্ষাকবচ দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। একটা হচ্ছে, আল্লাহর ভয় অন্তরে লালন করা। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, লজ্জা ও দোষের কলঙ্কের অনুভূতি।
… - ৩। কোন মুসলিমের সাথে কৃত অঙ্গীকার যেন আমরা কখনো ভঙ্গ না করি। এমনকি কোন কাফেরের সাথেও এমন করা যাবে না। আমাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অবস্থা দুটোই যেন একই রকম হয়। মুখে মধু অন্তরে বিষ, এমন দোষ যেন আমাদের স্পর্শ না করতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
… - ৪। ঝগড়া বাধলে আমাদের নিজেদেরকে যে কোন মূল্যে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কোন অবস্থাতেই গাল-মন্দ করা যাবে না। বরং জিহ্বার উপর তাকওয়ার লাগাম দিয়ে রাখতে হবে। আমরা স্বাভাবিক থাকি কিংবা রাগান্বিত থাকি, কখনো কারো উপর কথার মাধ্যমে জুলুম করা যাবে না।
এভাবে এ চারটি গুণ নিজের মধ্যে চাষ করলে আমরা নিজেদেরকে মুনাফিকি স্বভাব থেকে মুক্ত রাখতে পারবো ইন শা আল্লাহ্। অন্যদিকে যদি মুনাফিকির চারটি স্বভাব আমাদের মাঝে থাকে, তাহলে আমরা তো অনেক ভয়ংকর বিপদের সম্মুখীন। এখনই আমাদের সুন্দর আত্মাকে এসব মন্দ স্বভাব থেকে মুক্ত করতে হবে।
[ হাদিস থেকে শিক্ষা ]
১। ইসলাম আমাদের বলে না যে, আমরা কেবল ইবাদতগুলোকে গুরুত্ব দিতে আর পারষ্পরিক আচরণবিধি ও আখলাকের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করতে। বরং দ্বীন ইসলাম হচ্ছে ইবাদত, আখলাক ও পারষ্পরিক আচরণবিধির সমষ্টি।
২। কখনোই বাড়াবাড়ি করবেন না। অতিরঞ্জিত করবেন না। কারো মধ্যে যদি মুনাফিকির চারটি মন্দ স্বভাবগুলোর যে কোনো একটি বিদ্যমান থাকে, তাহলে তাকে সরাসরি মুনাফিক বলা যাবে না। কেননা নবিজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, উপরের চারটি মন্দ স্বভাবের সবগুলো যদি একজন লোকের মধ্যে পাওয়া যায়, কেবল সে-ই খাঁটি মুনাফিক হিসেবে পরিগণিত হবে।
[ করণীয় ]
- কোন অবস্থাতেই আমানতের খেয়ানত করা যাবে না;
- সর্বাবস্থায় সত্য কথা বলতে হবে;
- কোন প্রকার ওয়াদা ভঙ্গ করা যাবে না;
- ঝগড়া এবং গাল-মন্দ পরিহার করতে হবে;
[ শেষের কথা ]
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিকট কায়মনোবাখ্যে প্রার্থনা করুন আর আশ্রয় চান যাতে আল্লাহ্ আমাদের থেকে এ সমস্ত মুনাফিকি স্বভাব পরিহার করার তাওফিক দান করুন এবং আল্লাহর প্রিয়ে হাবিব (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেভাবে আমানতদার, সত্যবাদী, ওয়াদা পালনকারী, উত্তম আচরণের অধিকারী ছিলেন তেমনি আমাদের হবার তাওফিক দান করুন এবং সেভাবে আমাদের পরিচালিত করুন। (আমিন)
(1) সহিহুল বুখারি, ৩৪ । সহীহ মুসলিম, ১১৩ (হাদীস একাডেমী)
বইঃ হাদিস পড়ি আদব শিখি
লেখকঃ শাইখ আলী জাবির আল-ফাইফি
প্রকাশকঃ রুহামা পাবলিকেশন