জবানের আদব সিরিজঃ জবানের হেফাজত করা

[ প্রারম্ভিক ]

আমরা অনেক সময় অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে, অথবা কথার কদর্যতা না চিন্তা-ভাবনা না করে, অথবা, কি পরিণতি হবে না পর্যালোচনা না করেই প্রায়ই মুখ ফসকে অনেক রকম কথা বলে ফেলি, যার কারণে আমরা নিজে তো ধ্বংস হয় ঠিকই, সেই সাথে অন্যকেও এমন দিকে ঝুকিয়ে ফেলে যার কারণে সে কষ্ট পায় নতুবা মানসিক অসুস্থতায় ভুগে নতুবা অন্য কোন খারাপ অবস্থানে পড়ে যায় যার থেকে উত্তোরণ তার জন্য খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। হাদিসে তাই জবানের হেফাজতের উপর অনেক গুরুত্ত্বারোপ করা হয়েছে এবং সেই সাথে কঠিন শাস্তির কথা এসে যা নিচের হাদিস পড়লেই বুঝতে পারব আমরা সকলেই।

 

[ হাদিস ]

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে বলতে শুনেছেনঃ

 إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ مَا فِيْهَا يَهْوِي بِهَا  إِلَى النَّارِ أَبْعَدَ مِمَّا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ

❛ বান্দা চিন্তা-ভাবনা না করে এমন কথা বলে ফেলে, যার কারণে সে জাহান্নামের এত গভীরে গিয়ে পতিত হয়, যার দূরত্ব পূর্ব থেকে পশ্চিমের দূরত্বের সমান। ❜ (1)

 

[ ব্যাখ্যা ]

জবানের কারণে দুর্ঘটনার ইতিহাস সুপ্রাচীন। এখনো অন্তহীন চলছে এসব দুর্ঘটনা। মু’আজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবিজি ﷺ -কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমরা জবানে যা বলি, তার জন্য কি আমাদের জবাবদিহি করতে হবে?’  নবিজি ﷺ বললেনঃ 

ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ

❛ হে মু‘আজ! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষের জবানের যথেচ্ছ ব্যবহারের কুফলই তাকে অধোমুখো করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। ❜ (2)

আমাদের কীসের মাধ্যমে গিবত করি? জবান দিয়ে। কীসের মাধ্যমে মিথ্যা বলি? জবান দিয়ে। চোগলখুরি, প্রতারণা, ধোঁকা প্রভৃতির মাধ্যমও এ জবান
তাহলে এখন ভাবুন, আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু আমাদের এ জবান। আমরা শত্রু থেকে যতটা সতর্কতা অবলম্বন করব, এ জবানের ব্যাপারেও ততটা সতর্কতা অবলম্বন আমাদের করতে হবে। যদি এতটুকু করতে পারি, তবে আল্লাহর সাহায্যে আমরা জবানের কুফল থেকে বাঁচতে পারব। অন্যথা জবানের কুফল সম্পর্কে হাদিসে যেমন এসেছে, এ শত্রু তোমাকে জাহান্নামের কয়েক স্তর নিচে নিয়ে যাবে, নাউজুবিল্লাহ!
ভেবে দেখেন, কোনো কথা আমরা ঠাট্টাচ্ছলে বলছি অথবা আমাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বলছি অথবা যে কোনো কারণে পরোয়াহীন কোনো কথা বলে ফেললে-আর সে কথাটাই আমাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়! তাহলে কি করবেন?… এ হাদিস নিয়ে চিন্তাভাবনা আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। এবং মুখ থেকে একটা শব্দ বের করার আগে কয়েকবার ভেবে দেখতে হবে। আমরা জানিনা এমন কোন কথা বলবা না অথবা আমাদের ভালো উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে না এমন কথাও বলব না বা বলা থেকে বিরত থাকব।

 

[ ফায়দা ]

১. যারা নিছক মজা করার অজুহাতে মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে এবং মিথ্যা কথা বলে, তাদের প্রতি এ হাদিসে ভীষণ সতর্কবার্তা বর্ণিত হয়েছে।
২. চিন্তাভাবনা করে, পরখ করে কথা বলার গুরুত্ব অনেক। চিন্তাভাবনা করে কথা না বলা কখনো কখনো মানুষকে ধ্বংস করে ছাড়ে।

 

[ করণীয় ]

১। মুখ থেকে কোন একটা শব্দ বাহির করার পূর্বে আমাদের কয়েকবার ভেবে দেখতে হবে।
২। আমরা না জেনে কোন কথা বলব না বা বিরত থাকব।
৩। আমরা যে বার্তা দিতে চায় অন্যদের সেটাও যদি ভালো উদ্দেশ্য ব্যক্ত না করে, তাহলে এমন কথাও আমরা বলব না বা বিরত থাকব।
৪। যখন দেখবেন, আপনার সহপাঠী শিক্ষককে নিয়ে উপহাস করছে অথবা আপনার কোনো সহপাঠীকে নিয়ে কিংবা অন্য কাউকে নিয়ে উপহাসে মেতে উঠছে, তখন তাকে এ হাদিসটি স্মরণ করিয়ে দেবে। হয়তো সে বিরত হবে।

 

 

 

[ শেষের কথা ]

আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদের সকলকে আমাদের জবানকে হেফাজত করুন সকল প্রকার খারাবী থেকে। (আমিন)

 


(1) সহিহ মুসলিম, ২৯৮৮ (আন্তর্জাতিক ভার্শন) / সহিহ মুসলিম, ৭৩৭২ (হাদিস একাডেমী
(2) জামে’ আত-তিরমিজী, ২৬১৬; হাদিসটি হাসান সহিহ 


বইঃ হাদিস পড়ি আদব শিখি
লেখকঃ শাইখ আলী জাবির আল-ফাইফি
প্রকাশকঃ রুহামা পাবলিকেশন