অধিকার আদায়ের আদব সিরিজঃ সদাচরণের জিহাদ

[ প্রারম্ভিক ]

ইসলাম সদাচরণের ওপর জোর তাগিদ দিয়েছে। আর মানুষের সদাচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বড় পাওনাদার হলেন আপন পিতা-মাতা। ইসলামে মাতা-পিতার সাথে সদাচরণকে জিহাদের সমতুল্য মনে করা হয়।

 

[ হাদিস ]

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত… তিনি বলেনঃ

،جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلمَ، فَاسْتَأْذَنَهُ فِي الْجِهَادِ
﴾فَقَالَ: ﴿ أَحَيٌّ وَالِدَاكَ ﴾ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: ﴿ فَفِيْهِمَا فَجَاهِدْ

❝ এক লোক নবিজি ﷺ -এর কাছে এসে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে,
তিনি ﷺ বললেন, [ তোমার কি মা-বাবা জীবিত? ] লোকটি বলল, [ জ্বী ]।
নবিজি ﷺ বললেন, [ তাহলে তাদের সাথে সদাচরণই জিহাদ, তুমি এ জিহাদকেই গুরুত্ব দাও ] ❞ ①

 

[ ব্যাখ্যা ]

এক লোক নবিজি ﷺ-এর কাছে এসে তাঁর সঙ্গে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইল। জিহাদ হচ্ছে সবচেয়ে বড় ও মর্যাদাময় ইবাদত। তাই সাহাবীগণ নবিজি ﷺ-এর সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা করতেন; যেন জিহাদ করে অশেষ নেকি অর্জন করা যায়। এ লোকটি অনুমতি চাইলে নবিজি ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, ❝ তোমার মা-বাবা কি জীবিত? ❞ সে উত্তর দিল, ❝ হ্যাঁ। ❞ তখন নবিজি ﷺ এ লোকটির ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে বড় জিহাদ হবে, সেটার নির্দেশ দিলেন। আর তা হচ্ছে, মা-বাবার সদাচরণ এবং তাদের প্রয়োজন পূরণের জিহাদ।

এখন আমাদেরও কর্তব্য হচ্ছে, আমরা আমাদের মা-বাবার আনুগত্যে ও তাদের সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ব্যয় করব, তারা যেন কোনোভাবে অসন্তুষ্ট না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকব। কারণ, মা-বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি মিলে, মা-বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।

 

[ শিক্ষণীয় বিষয় ]

১। লক্ষ করুন, মা-বাবার অবস্থান কতটা উঁচু। এ সাহাবির ক্ষেত্রে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার উপরে মা-বাবার সেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

২। এ হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, মা-বাবার আনুগত্য সহজ কিছু নয়। এ কারণেই এ কাজকে হাদিসে ‘জিহাদ’ শব্দে রূপায়ণ করা হয়েছে এবং এর সমতুল্য বলা হয়েছে। তাই আমাদের উচিত ধৈর্য ধরে মা-বাবার সেবা করে যাওয়া।

 

[ করণীয় ]

আমাদের সকলকে এ অভ্যাস গড়ে নিতে হবে যে, যখনই মাদরাসা থেকে বাড়ি ফিরবে, তখনই মা- বাবার কাছে ছুটে গিয়ে তাদের কপালে চুমু এঁকে দেবে। কারণ, এটা হচ্ছে সে ভালোবাসা ও নম্রতার বহিঃপ্রকাশ, যার আদেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ তাআলা।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পবিত্র কুরআনের ১৭ নম্বর সূরা আল-ইসরার ২৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করেনঃ

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ

আর তাদের সামনে সদয়ভাবে নম্রতার বাহু প্রসারিত করে দাও। ❞ ②

 

[ শেষের কথা ]

সন্তানের জন্য তার পিতা-মাতার খেদমতের সুযোগ পাওয়া বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। সহজ জান্নাতপ্রাপ্তির গ্যারান্টি। পিতা-মাতার জন্য দোয়া করার ভাষাও আল্লাহতায়ালা শিখিয়ে দিয়েছেন এবং সেখানে শৈশবে পিতা-মাতা সন্তানকে যে স্নেহ-যত্ন ও আদর দিয়ে লালন-পালন করেছেন, সেটা স্মরণ করেই আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করতে বলেছেন।

 


সহিহুল বুখারী, ৩০০৪, ৫৯৭২। সহিহ মুসলিম, ৬৪০১ । হাদিসের মানঃ সহিহ

সুরা আল-ইসরা, (১৭: ২৪)


বইঃ হাদিস পড়ি আদব শিখি
লেখকঃ শাইখ আলী জাবির আল-ফাইফি
প্রকাশকঃ রুহামা পাবলিকেশন