জবানের আদব সিরিজঃ দ্বিমুখী (দু’মুখো) স্বভাব পরিহার করুন

[ সংজ্ঞা ]

দ্বিমুখী / দু’মুখো / দু’রুপধারী হলো এমন নিকৃষ্ট মানুষ যারা কথা পাল্টাতে থাকে এমন করে যেন মনে হবে এদের মুখ কয়েকটা। হরেক অবস্থায় হরেক রকম রূপ ধরে এক একজনের কাছে। আপনি বুঝবেন-ই না, আসলে কতটা জঘন্য মানুষ হতে পারে এরা। উদাহরণ স্বরূপ, শাসকের সামনে প্রশংসা করে এবং বাইরে বের হতেই উল্টা কথা বলা শুরু করে।

 

[ হাদিস ]

সুনানে আবু দাউদ থেকে পাওয়া যায় —- আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, …… নবী ﷺ বলেছেনঃ

 إِنَّ مِنْ شَرِّ النَّاسِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِي يَأْتِي هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ وَهَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ

❝ নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হলো দ্বিমুখী চরিত্রের লোক। তারা এক দলের নিকট এক চেহারা নিয়ে এবং অপর দলের নিকট অন্য চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ❞ (1)

————————————————————————————————-

আবার সহিহ বুখারীর রেওয়াতে দেখা যায়, আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, …… নবী ﷺ বলেছেনঃ

جِدُ مِنْ شَرِّ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ اللَّهِ ذَا الْوَجْهَيْنِ، الَّذِي يَأْتِي هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ وَهَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ

❝ ক্বিয়ামাতের দিন তুমি আল্লাহ্‌র কাছে ঐ লোককে সব থেকে খারাপ পাবে, যে দু‘মুখো। সে এদের সম্মুখে এক রূপ নিয়ে আসতো, আর ওদের সম্মুখে অন্য রূপে আসত। ❞ (2)

————————————————————————————————-

এদের অবস্থা সম্পর্কে সুনানে আবু দাউদের রেওয়াতে পাওয়া যায়, আম্মার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত … রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ

مَنْ كَانَ لَهُ وَجْهَانِ فِي الدُّنْيَا كَانَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِسَانَانِ مِنْ نَارٍ

❝  দুনিয়াতে দ্বিমুখী স্বভাবের লোকের ক্বিয়ামতের দিন আগুনের দু’টি জিহ্বা হবে। ❞ (3)

 

[ ব্যাখ্যা ]

একটা সমাজ আল্লাহর শরিয়ত ও নবিজি-এর আদর্শ থেকে যত দূরে সরবে, তাদের মধ্যে তত বেশি নানান রোগ ছড়াবে, তাদের মধ্যে তত বেশি  দোষত্রুটি দেখা দেবে। যে সমাজে সঠিকভাবে নসিহত ও দিক-নির্দেশনা প্রদানকারীর অভাব হবে, তারা মানবজাতির মধ্যে একটি বিপজ্জনক জাতি হিসেবে আবির্ভূত হবে। মিথ্যা থাকবে তাদের মুখের আগায়। ক্ষণে ক্ষণে রং পরিবর্তন করা তাদের কাছে পানির মতো সহজ হবে। এরাই হচ্ছে দুমুখো। যারা একজনের কাছে বসলে এমন ভাব প্রকাশ করে যে, যেন তারা তাকে সবচেয়ে উত্তম সর্বাধিক ভালো হিসেবে জানে আর অন্যরা হচ্ছে এমন মানুষ, যাদের মাঝে কোনো কল্যাণ নেই। এরপর যখন তারা অন্যদের সাথে বসে, তখন এমন ভাব প্রকাশ করে যে, যেন তারা এদের সবচেয়ে উত্তম ও সর্বাধিক মুত্তাকি হিসেবে জানে আর সব দোষ ঐ লোক সকলের।

এদেরকেই নবিজি দুনিয়া-আখিরাতের সবচেয়ে খারাপ মানুষ বলেছেন। কারণ, তারা বন্ধু-বন্ধুতে ঝগড়া বাধায়। পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কে অবনতি ঘটায়। সমাজের লোকদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে। এই ধরনের মানুষ ইসলামে নিন্দিত এবং এরকম কাজ করা হারাম। তারা মুসলিম সমাজকে দূষিত করে। জীবন থেকে হাসির পরশ কেড়ে নেয় এরা।

 

[ শিক্ষা ]

১। এ হাদিসে অন্যের কারণে নিজের কথা ও নীতির পরিবর্তন করা, দ্বিমুখী আচরণ করা, এখানে এক রকম ওখানে অন্য রকম কথা বলা, এখানে লোভের কারণে এক রকম প্রকাশ করা আবার ওখানে ভয়ে অন্য রকম প্রকাশ করা হারাম করে দেওয়া হয়েছে।

২। হাদিসে থেকে আরো বোঝা যায়, সবচেয়ে খারাপ মানুষের একটা শ্রেণি হচ্ছে দুমুখো লোকগুলো। এমন নিকৃষ্টদের অন্যান্য শ্রেণি যেমনঃ গিবতকারী, চোগলখোর, মিথ্যাবাদী প্রমুখ।

[ করণীয় ]

  • যদি কখনো আপনার কাছে কেউ আরেকজন সম্পর্কে খারাপ কোনো কথা বলতে আসে, তবে তার কথায় কান দেবে না। কেননা, আল্লাহ তাআলা এমন কথা বলা ও শোনা হারাম করে দিয়েছেন। কারণ, আজ যে আপনার কাছে অন্যের ব্যাপারে খারাপ কথা বলছে, আগামীকাল সে আরেকজনের কাছে গিয়ে আপনার সম্পর্কে খারাপ কথা বলবে আর সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে বিচ্ছিরি কাণ্ড ঘটিয়ে দেবে।
  • এই সব মানুষদের কুরআন এবং হাদিসের মাধ্যমে নসিহত করার চেষ্টা করবেন এবং কিয়ামতের দিন ভয়ানক শাস্তির কথা নিয়ে আলোচনা করবেন।
  • আমরাও নিজেরা কথা ও নীতি পরিবর্তন করব না কোন অবস্থাতে। সকলের সাথে এক রকম কথা-ই বলবেন। কারো কাছে সাধু সাজার জন্য নিজেদের মত পরিবর্তন করতে থাকবেন না।
  •  আপনারা সব সময় এমন মানুষের সাথে ওঠাবসা করা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবেন।
  • এমন কাউকে নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না কখনো। কেননা, তারা বন্ধুর পোশাকে শত্রু।

 


(1) সুনানে আবু দাউদ, ৪৮৭২সহিহ বুখারী, ৭১৭৯ । সহিহ মুসলিম ৬৫২৪,৬৫২৫ । হাদিসের মানঃ সহিহ

(2) সহিহ বুখারী, ৬০৫৮ । হাদিসের মানঃ সহিহ

(3) সুনানে আবু দাউদ, ৪৮৭৩ । হাদিসের মানঃ সহিহ


বইঃ হাদিস পড়ি আদব শিখি
লেখকঃ শাইখ আলী জাবির আল-ফাইফি
প্রকাশকঃ রুহামা পাবলিকেশন