Post Views: 15
[ হাদিস ]
আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিতঃ
أَنَّ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ׃ «أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟» قَالُوا׃ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ׃ «ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ» قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ قَالَ׃ «إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ، فَقَدِ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ»
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ ❝ তোমরা কি জান, গীবত কি জিনিস? ❞ তাঁরা বললেন, ❝ আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলই অধিক জ্ঞাত। ❞ রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ❝ (গীবত হলো) তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা বলা সে অপছন্দ করে। ❞ প্রশ্ন করা হলো, ❝ আমি যা বলছি, তা যদি আমার ভাই-এর মধ্যে বাস্তবিকই থেকে থাকে ,তবে আপনি কি বলেন? ❞ রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ❝ তুমি তার সম্পর্কে যা বলছ তা যদি তার মধ্যে প্রকৃতই থেকে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে। ❞ (1)
[ ব্যাখ্যা ]
আজকের অবস্থা তো এমন যে, কোনো মজলিশ, এমনকি পড়াশুনার ক্লাসও গীবতমুক্ত থাকে না। যেমনই নবিজি ﷺ বলেছেন, ❛ তোমার ভাই অপছন্দ করে, এমন শব্দে তার সম্পর্কে বলা ❜; আপনারা গীবত চর্চাকারীদের দেখবেন, তারা অনুপস্থিত মুসলিমকে নিয়ে নিন্দায় লিপ্ত হয়, তার দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে। কখনো সহপাঠী, কখনো শিক্ষক, আবার কখনো আলিম বা দায়িত্বশীলদের মধ্যকার কাউকে নিয়ে গীবতের চর্চা চলে।… এমনকি এ গীবতের কেন্দ্রবিন্দু কোনো সাধারণ মুসলিমও হয়ে থাকে।…
গীবত ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মারাত্মক এক অপরাধ। কারও অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমনভাবে কথা বলা, যা সে অপছন্দ করবে, এমন কাজ নিশ্চয় অভদ্রতার শামিল। কারও একটা ভুলের কারণে আমরা তার বদনাম করে গেলে; যদিও আদতেই সে কোনো ভুল করে থাকে। আবার কখনো কখনো তার কাজ সম্বন্ধে আমাদের কুধারণার ফলে গীবতের দিকে অগ্রসর হলে। আবার কখনো তার ভুল সে বুঝে লজ্জিত হয়ে তাওবা করে নেওয়ার পরেও আমরা গীবতের দিকে অগ্রসর হলে (এমনটা করা নিশ্চয় অপরাধ)।
মহান আল্লাহ তা’আলা গীবতকারী সম্পর্কে বলেছেন, গীবতকারী তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণকারী। আল্লাহ্ তা’আলা কুরআনের ৪৯ নম্বর সূরা আল-হুজুরাতের ১২ নম্বর আয়াতে বলেনঃ
وَلَا يَغۡتَبْ بَّعۡضُكُمۡ بَعۡضًا ؕ اَ يُحِبُّ اَحَدُكُمۡ اَنۡ يَّاۡكُلَ لَحۡمَ اَخِيۡهِ مَيۡتًا فَكَرِهۡتُمُوۡهُ ؕ
❛ আর তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা ত সেটাকে ঘৃণাই করে থাকো। ❜ (2)
এ ঘৃণ্য সাদৃশ্য নিয়ে চিন্তা করে দেখুন। ভেবে দেখুন, গীবত কত নিকৃষ্ট অপরাধ।
আর গীবতের চেয়েও নিকৃষ্ট কর্ম হচ্ছে, কেউ কোনো মুসলিমের মধ্যে না থাকা দোষ তার ওপর চাপিয়ে দিয়ে অপবাদ আরোপ করা।
গীবত ও আপবাদ আরোপ করা দুটাই অনেক বড় কবিরা গুনাহ। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, গীবত ও অপবাদ দেওয়া থেকে আমাদের মজলিশকে মুক্ত রাখা। অন্যথায় আমরা নিজেরাই দুনিয়া ও আখিরাতে নিজেদের বহু ক্ষতি ও শাস্তির দরজা খোলার জন্য দায়ী থাকব।
[ ফায়দা ]
১। হাদিসে গীবতের যথাযথ সংজ্ঞা বলা হয়েছে। সেটা হচ্ছে, অপর ভাই সম্পর্কে আমাদের এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে।
২। কিছু মানুষ এমন আছে, যাদের তুমি গীবত করতে নিষেধ করলে আপনাকে বলবে, ❛ আমি এটা সে লোকের সামনে সরাসরি বলতে পারব। ❜ কিন্তু তবুও তার এ কথা তাকে গীবতকারীর কাতার থেকে বের করে দেয় না; বরং সে গীবতকারীরই অন্তর্ভুক্ত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধী। তাই এমন শয়তানি কথাবার্তা থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
[ করণীয় ]
- গীবতকারীদের সামনে কঠোর প্রতিবাদ গড়ে তুলবে সব সময়।
- যদি উপস্থিত কেউ অনুপস্থিত কারও সম্পর্কে বিরূপ কথা বলতে শুরু করে, সাথে সাথে তাকে বলবেন, ❛ তুমি কি তোমার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে প্রস্তুত আছ? ❜
[ শেষের কথা ]
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিকট প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের এমন নিকৃষ্ট কাজ থেকে আমাদের সর্ব হালতে বিরত রাখেন। (আমিন)
(1) সহীহ মুসলিম, ৬৪৮৭ । হাদিসের মানঃ সহিহ
(2) সূরা আল-হুজুরাত (৪৯ঃ১২)
বইঃ হাদিস পড়ি আদব শিখি
লেখকঃ শাইখ আলী জাবির আল-ফাইফি
প্রকাশকঃ রুহামা পাবলিকেশন